শুধু বিদ্যুৎ-জ্বালানি কেন্দ্র নয়, মডেল সিটি হিসেবেও গড়ে উঠছে মহেশখালী
দেশের শিল্পোন্নয়নের পথ বেয়ে বেড়েছে বিদ্যুৎ-জ্বালানির চাহিদা। তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের হাত ধরেও। দেশীয় উৎস থেকে এর পুরোটা মেটানো সম্ভব নয়। তাই অপেক্ষাকৃত কম খরচে অধিকতর নিরাপদ উপায়ে তেল-গ্যাস আমদানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং এগুলো শিল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সবচেয়ে বড় সরবরাহকেন্দ্র বা ভরকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ মহেশখালী।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে মহেশখালীতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩১টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আরো ৩৭টি প্রকল্প রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৬৮টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল, স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্র থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল খালাস ও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা উদ্যোগ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ মিটার উচ্চতায় থাকা মহেশখালী দ্বীপটিতে নির্মিত হচ্ছে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, পাঁচটি এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনালসহ এসপিএমের আওতায় ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ লাইন ও তেল মজুদাগার।
মাতার বাড়ীতে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। নির্মিত হবে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র চ্যানেল। রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মহেশখালীতে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত মূলত লবণ উৎপাদন, মাছ শিকার, পানচাষ এবং শুঁটকি তৈরির ওপর। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ আগের লবণের ঘের-মাঠে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গড়ে উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চাষের মাঠ হারানোর দুঃখ কারো করো মধ্যে থাকলেও নতুন আয়ের উৎস পেয়ে খুশি তারা।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মহেশখালী শুধু জ্বালানির কেন্দ্র নয়, মডেল সিটি হিসেবেও গড়ে উঠবে। ধলঘাটের স্থলভাগে দুটি এলএনজি টার্মিনালের পাশাপাশি আরো একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল করবে সরকার। তিনটি টার্মিনাল দৈনিক ৩৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে। পেট্রোবাংলা ও সামিটের দুটি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সররবরাহ শুরু হয়েছে আরো আগেই। এই দুটির দৈনিক সরবরাহ ক্ষমতা ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস।
মহেশখালী ধলঘাটা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এই এলাকায় ইতোমধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে মাতার বাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লি। প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৩-১৪ সালে। ৬০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট থাকবে কেন্দ্রটিতে। জাইকা এতে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকার অর্থ সহায়তা দিচ্ছে।
মহেশখালীর নিকটবর্তী সমুদ্র এলাকায় সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরাসরি দেশের জ্বালানি তেল সরবরাহ ছাড়াও আমদানি করা তেল চট্টগ্রাম-ঢাকায় পাঠানোর জন্য স্থাপন করা হচ্ছে ২২০ কিলোমিটার পাইপ লাইন। এ প্রকল্পটি চালু হলে বার্ষিক ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে সরকারের। মহেশখালীর কালারমার ছড়াতে তেল মজুদের জন্য বিশাল অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।
কেন্দ্রের তড়িৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, আগামী ২০২৪ সালে বাণিজ্যিকভাবে তারা উৎপাদনে যাবেন। প্রকল্পের কাজও ইতোমধ্যে ৮৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
জানা যায়, এসপিএস প্রকল্পে সমুদ্রভাগে ১৩৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন রয়েছে। এ ছাড়া এইচভিডি ক্রসিংয়ের জলভাগ অংশে ১১ কিলোমিটারসহ মোট ১৪৬ কিলোমিটার তো রয়েছেই। এ ছাড়া স্থলভাগের পাইপ লাইন ৭৪ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে ১৮ ইঞ্চি ও ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২২০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মিত হচ্ছে।