অনিয়মের অভিযোগের পর টেন্ডার বাতিল করলেন বিভাগীয় প্রকৌশলী

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে রেলওেয়ের টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ উঠার পর দরপত্র আহ্বান বাতিল করেছেন বিভাগীয় প্রকৌশলী নাজিব কায়সার। ১৯ ফেব্রুয়ারী বুধবার দুপুরে টেন্ডারে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক ঠিকাদাররা ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুললে ২০ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার সেই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করেছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, গত ৫ ফেব্রুয়ারী রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের অধীনে সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য কাজসহ ১৫ টি কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে তিনি ছিলেন এই টেন্ডারের আহবানকারী । বুধবার ছিল সেই দরপত্র ক্রয়ের শেষ দিন। এই দিন আনিছুর রহমান, মোস্তাকিন, বোরহান উদ্দিন, শাহীন সহ কয়েকজন ঠিকাদার ওই বিভাগীয় প্রকৌশলীর অফিসে গিয়ে জানতে পারেন নাজিব কায়সার অবৈধ সুবিধা নিয়ে তাঁর পছন্দের ঠিকাদারদের কাজগুলো দেয়ার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে সম্পন্ন করে ফেলেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা নাজিব কায়সারকে কল করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এসময় ঠিকাদার আনিছুর রহমানের সাথে তাঁর বাকবিতণ্ডা হয়। পরে বিষয়টি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জানালে লালমনিরহাট জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক সিয়াম ইবনে নিয়াজ রেজা লালমনিরহাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দেন। এছাড়া আজ বৃহস্পতিবার সকালে টেন্ডার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বরাবর একটি আবেদনও করেন।
বেশ কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, টেন্ডারে অংশগ্রহণের জন্য আমরা অফিসে যাই। কিন্তু ডিইএন (বিভাগীয় প্রকৌশলী) অফিসে ছিলেন না। সেখানকার বড়বাবু (হেড ক্লার্ক) ফিরোজের সাথে কথা বললে আমাদেরকে তিনি জানান যে, ডিইএন তাঁর পছন্দের ঠিকাদারদের ইতিমধ্যেই কাজ ভাগ করে দিয়েছেন। পরে আমরা ডিইএন-কে কল দিলে আমাদের কারো ফোন তিনি ধরেননি। এরপর বড়বাবু কল করলে তাঁর ফোনে আমাদের একজন কথা বলেন। সেসময় তাঁর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। বাধ্য হয়ে আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের জানিয়েছি। তারা ক্যাম্পে একটা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আরেক ঠিকাদার শাহীন বলেন, “আওয়ামী আমলের মতই পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার। রেট কোড ওপেন না করে নিজের কাছে রেখে টাকার বিনিময়ে পছন্দসই ঠিকাদরকে সেই রেট কোড জানিয়ে কাজ দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সিয়াম ইবনে নিয়াজ রেজা বলেন, টেন্ডারের দুর্নীতি নিয়ে আমরা সেনা ক্যাম্পে একটি তাৎক্ষণিক অভিযোগ দিয়েছি, এছাড়া রেলের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বরাবরের একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি তারা ব্যবস্থা নিবেন।
এদিকে সরেজমিনে বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ওই দপ্তরের প্রধান অফিস সহকারী ফিরোজ হোসেন জানান, টেন্ডারটি ইতিমধ্যে বাতিল করেছেন বিভাগীয় প্রকৌশলী। একই কথা জানিয়েছেন ওই অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরাও।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে বিভাগীয় প্রকৌশলী নাজিব কায়সার এবং বিভাগীয় ব্যবস্থাপক লিয়াকত শরীফ খানকে একাধিকবার কল করে ও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।