শিরোনামঃ
গাজীপুরে নকল জুস কারখানায় ভোক্তা অধিকারের অভিযান লালমনিরহাটে ক্লাশ চলাকালীন বিদ্যালয়ে আগুণ পুড়ে গেছে দুই শ্রেণীকক্ষ! ৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ এসএসসি পাস করেনি অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা ইতালির সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতা বাড়ছে বাজেটে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু মাদকপাচার রোধে আসছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বোরো উৎপাদন নাগরিকত্ব সনদ ছাড়াই এনআইডি করতে পারবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশিরা ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন এবার চলবে পদ্মা সেতু দিয়ে ইউরোপে নতুন শ্রমবাজার সার্বিয়া ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে স্থায়ী বন্ধন’ ডেঙ্গু ঠেকাতে এবার মাস্টারপ্ল্যান হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক জলাধার ঠিক রেখে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে যাত্রী সুবিধা অনলাইনে চার্জ নেবে দেশের ৪ স্থলবন্দর কাজিপুরে মা দিবসে আলোচনা সভা কাজিপুরে সিএজি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলোচনা সভা সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মুস্তাক আহমেদের মতবিনিময় সলঙ্গায় জিনের বাদশা প্রতারক চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার-৬টি সোনালী রংয়ের মুর্তি উদ্ধার

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে শোকজ পেলেন মমিনুর ছকিনা দম্পতি!

কলমের বার্তা / ১৭ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট : স্বামী স্ত্রী দুই জনের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির দুইটি কার্ড থাকলেও দীর্ঘ ৮ বছরে এক ছটাক চাল না মিলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে শোকজ পেলেন মমিনুর ছকিনা দম্পতি। সাম্প্রতিক সময় শোকজের জবাবও দিয়েছেন সরকারী সুফল বঞ্চিত এ দম্পতি। উল্টো অভিযোগ তুলে নিতে আপোষের জন্য তদন্ত কমিটি চাপ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

একই পরিবারে স্বামী স্ত্রী দু’জনের কার্ড করে নিয়ে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে আত্নসাৎ করা ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে গত ২৭ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী দিনমজুর মমিনুর ইসলাম। মনিনুর ইসলাম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বর ম্যালম্যালির বাজার এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে। ছকিনা খাতুন তারই স্ত্রী।

জানা গেছে, হতদরিদ্র শ্রমিক দিনমজুর পরিবারের মানুষদের মাঝে অল্প মুল্যে চাল বিক্রি করতে সরকার খাদ্য বান্ধব কর্মসুচি চালু করে। প্রথম দিকে ভর্তুকী মুল্যে ১০ টাকা কেজি দরে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি হারে চাল বিক্রি শুরু করে সরকার। পরবর্তিতে দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা কেজি দর করা হয়। স্থানীয়রা এ কারনে এ কার্ডকে ১০ টাকার কার্ড নামেই জানেন। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির ডিলার এনামুল হক ভরসা চালের কার্ড করে দেয়ার কথা বলে ২০১৬ সালে দিনমজুর মমিনুর ইসলামের কাছ থেকে তার নিজের ও তার মায়ের পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করেন। পরিচয় পত্র নিয়ে উপজেলা খাদ্য অফিস থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির কার্ড করলেও তা মমিনুর ইসলামের কাছে গোপন রাখেন ডিলার ভরসা।
গত ১৮ সালে মমিনুর ইসলামের মা রশিদা বেগম মারা গেলেও তার নামে বরাদ্ধের চাল উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেন ডিলার এনামুল হক ভরসা। অপর দিকে গেল বছর সরকার কার্ডধারীদের তথ্য ডিজিটাল করায় বিপাকে পড়েন ডিলার এনামুল হক ভরসা। কারন, কার্ডধারীর আপডেট ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ লাগবে। তখন কৌশলে ডিলার এনামুল হক ভরসা মৃত কার্ডধারী রশিদার পুত্রবধু ছকিনার নামে কার্ড করে দেয়ার কথা বলে ছকিনার ও তার স্বামী মমিনুর ইসলামের ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করেন।

এরপর মৃত রশিদার স্থলে তার পুত্রবধূ ছকিনার নামে কার্ড তৈরী করেন ডিলার ভরসা। একই সাথে দিনমজুর মমিনুর ইসলামের নামে কার্ডেও তথ্য ডিজিটালে হালনাগাদ করে কার্ড দুটি নিজের কাছেই রেখে দেন ডিলার এনামুল হক ভরসা। স্ত্রী ছকিনার নামের কার্ডটির জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দিনমজুর মমিনুর নিস্ফল ঘুরেছেন ডিলারের দুয়ারে। গত মাসের চাল বিতরন কালে উপজেলা খাদ্য বিভাগ ডিলারদের মাঝে কার্ডধারীদের তালিকা নতুন করে বন্টন করেন। এতে শফিকুল ইসলাম নামে এক ডিলারের হাতে পড়ে মমিনুরের স্ত্রী ছকিনার নামের কার্ড। সেই কার্ডে চাল নিতে আসেন ডিলার এনামুল হক ভরসার দোকানের কর্মচারী নাইম। এতে সন্দেহ হওয়ায় ছকিনা বেগমকে ফোন করেন নতুন ডিলার শফিকুল ইসলাম। তখন মমিনুরের পরিবার জানতে পারেন ছকিনার নামে খাদ্যবান্ধবের কার্ড হয়েছে। কার্ড হয়েছে মর্মে স্বীকার করলেও ৫হাজার টাকা না দিলে কার্ড দিবে না বলে সাব জানায় ডিলার এনামুল হক ভরসা।

নিরুপায় দিনমজুর মমিনুর ইসলাম অল্প দামে চাল পেতে ডিলার ভরসাকে ঋনে নেয়া ২হাজার টাকা দেন কার্ডটি ফেরত পেতে। টাকা নিলেও কার্ড বা চাল কোনটাই দেননি ভরসা। উপজেলা খাদ্য অফিসে গিয়েও কোন কর্মকর্তা কর্মচারী দিনমজুর মমিনুরকে সহায়তা করেননি। বরংচ ডিলার ভরসার বিরুদ্ধে না গিয়ে ভরসার কথামত চলতে বলা হয়। পরে অন্য মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির চালুর দিন হতে দিনমজুর মমিনুর ইসলামের নামে কার্ড ও চাল বরাদ্ধ ছিল। যার কার্ড নং – ১৬৯ এবং তার মৃত মা রশিদার পরিবর্তে তার স্ত্রী ছকিনার কার্ড নং ১৪৮০ নামেও কার্ড চাল বরাদ্ধ ছিল। পরিবারে দুইটি কার্ড থাকার পরেও এক ছটাক চাল কিনতে পারেননি দিনমজুর মমিনুর ইসলাম ছকিনা দম্পতি।
অবশেষে ২৭ মার্চ তাদের নামে বরাদ্ধকৃত খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির কার্ড ও দীর্ঘ দিন ধরে আত্নসাৎ করা চাল উদ্ধার এবং অভিযুক্ত ডিলার এনামুল হক ভরসার বিরুদ্ধে বিচার দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মমিনুর ইসলাম।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, সমবায় ও সহকারী প্রোগ্রামারকে নিয়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন ইউএনও। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিজে আপোষ করার চাপ দেন বলে দাবি করেন অভিযোগকারী। এতে সম্মতি না দেয়ায় অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে গত ১৮ এপ্রিল শোকজন পত্র পাঠান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসনা আকতার। সেখানে দুই কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দাখিল করতে ব্যর্থ হলে তাদের উভয়ের কার্ড বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষনা দেয়া হয়।

ভুক্তভোগী মমিনুর ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে আমার পরিবারের নামে দুইটি কার্ড করে বিপুল পরিমান সরকারী চাল আত্নসাৎ করেছেন ডিলার এনামুল হক ভরসা। এতদিন খাদ্যবিভাগ তা চোখে দেখল না। আমি অভিযোগ দিলাম দুর্নীতিবাজ ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। এখন তারা দুর্নীতিবাজকে বাঁচাতে তথ্য গোপন করে না কি আমরা সরকারী সুবিধা আত্নসাৎ করেছি। তাই আমাকে শোকজ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হুমকী দিয়েছেন।

আদিতমারী উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক হাসনা আখতার বলেন, সত্য উৎঘাটনের জন্য বাদিকে আপোষ করার কথা বলেছি। বলতেই পারি। শোকজের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, অভিযোগকারীকে শোকজ করাটা দুঃখজনক। তিনি শোকজ না করলেও পারতেন। সেটা খাদ্য বিভাগের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে করেছেন হয়তো। তবে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পৌছেছে। বিশ্লেষন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

20


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর