সিরাজগঞ্জে সাবেক ২ এমপিসহ ৭৭ জন আওয়ামী নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: গত বছরের ৪ আগষ্ট সিরাজগঞ্জ শহরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন কলেজ ছাত্র আসিফ হোসাইন (১৯) হত্যা ঘটনার ৭ মাস পর সিরাজগঞ্জ-১ এবং ২ আসনের সাবেক এমপি প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় এবং ড. জান্নাত আরা হেনরীসহ বিভিন্ন উপজেলার ৭৭ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর নামে মামলা রুজু করা হয়েছে। এই মামলায় আরও ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি রয়েছে।
রোববার (২৩ মার্চ) দুপুর ১২ টার দিকে সিরাজগঞ্জ সদর আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত আসিফ হোসাইনের মা আসমানী খাতুন। আসিফ হোসাইন সিরাজগঞ্জ পৌরসভার একডালা পুনর্বাসন মহল্লার নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি সিরাজগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন। সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (অতিরিক্ত পিপি) হুমায়ুন কবির কর্নেল এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আদালত মামলার আবেদনটি শুনানি করে এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সিরাজগঞ্জ সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আব্দুল হাকিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর বারী, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেল, কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী, কাজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল হান্নান তালুকদার, চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই ভুট্টো, চৌহালী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হায়দার মুন্না, সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমজাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী।
মামলায় বলা হয়- ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকালে ছাত্র সমন্বয়কদের ডাকে আসিফ হোসাইন আন্দোলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর শহরের চৌরাস্তা মোড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। এভাবে দুপুর পর্যন্ত আসিফ অন্য ছাত্রদের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বেলা ২টার দিকে শহরের ভিক্টোরিয়া কোয়ার্টার হতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়ের নেতৃত্বে সব আসামিরা অবৈধ পিস্তল, শাটারগান, বন্দুক, হাতবোমা ও পেট্রোলসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে চৌরাস্তা মোড়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এ সময় ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্থানে ছোটাছুটি করতে থাকে।
এক পর্যায়ে আসামিরা কলেজছাত্র আসিফ হোসাইন ও তার বন্ধু শাহীন শেখকে এলোপাতাড়ি মারধর করে হত্যা করে। পরে তাদের মরদেহ সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী বাড়ির বাথরুমে লুকিয়ে রাখে। পরে গানপাউডার দিয়ে তাদের মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরেরদিন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। পরবর্তী মরদেহ শনাক্তের জন্য পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ টেস্ট করা হয়। যা গত ৪ মার্চ আসিফের পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।