বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
কোনাবাড়িতে ঝুট গোডাউনে আগুন,নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট কারামুক্ত হলেন ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন আব্দুল আলীমের মরদেহ দীর্ঘ আড়াই বছর পর ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন অতীতে ঘরে ঘরে চাকরি দেবার নাম করে হাহাকার দিয়ে গেছে রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্রীয় জাকের পার্টির নেতা রবিউল ইসলাম রবি ভাঙ্গুড়ায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু বেনাপোলে বিজিবি-বিএসএফ সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত সলঙ্গায় সেচ্ছাসেবকদলের শীতবস্ত্র বিতরণ গাজীপুরে ৯ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার-১ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিসপ্লে-তে ভেসে উঠেলো ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে আদম ব্যবসায়ী শাহীন ও মশিয়ারের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা সৌদি আরবে অবৈধ অভিবাসী!

বৈশাখী উৎসবে চাঙ্গা অর্থনীতি

রিপোর্টারের নাম : / ১৮৮ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ তলানিতে নেমে আসায় দু’বছর পর দেশের মানুষ এবার প্রাণ খুলে বৈশাখী উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন বিধিনিষেধের মুখে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকা মানুষ মুক্তবিহঙ্গের মতো এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে ঘুরে কেনাকাটা শুরু করেছে। নগরজুড়ে তীব্র যানজটের কারণে মার্কেট কেন্দ্রিক বেচাকেনা বেশখানিক ব্যাহত হলেও অনলাইন পস্ন্যাটফর্মে বৈশাখী পোশাকসামগ্রীর বেচাকেনায় রীতিমতো ঢেউ লেগেছে। ফলে এ উৎসব ঘিরে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

এদিকে কেনাকাটা বাড়ায় ২০ লাখ দোকানদার ও ব্যবসায়ীর মুখে হাসি ফুটেছে। করোনার কারণে গত দুবছর উৎসবকেন্দ্রিক বেচাবিক্রিতে যে ধস নেমেছিল এবার সব ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে- এ প্রত্যাশায় তারা বুক বেঁধেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈশাখী উৎসব ঘিরে আগেভাগেই ব্যাপক প্রস্তুতি নেন উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা। ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ, পুরান ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত কয়েক মাস আগে থেকে তৈরি হয়েছে জুতা, স্যান্ডেল ও গহনার পাশাপাশি পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রিপিসসহ এ উৎসব কেন্দ্রিক বিভিন্ন পোশাকসামগ্রী। পাশাপাশি আড়ং, লুবনান, ইয়োলো, অঞ্জনস্‌, সাদাকালো, বাংলার মেলা, রং, ভাসাবী, জারা, আলমাসসহ বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলো বৈশাখী উৎসব কেন্দ্রিক নানা পণ্যে তাদের শোরুমগুলোয় চোখ ধাঁধানো বৈচিত্র্য এনেছে। ইমিটেশন ও মাটির গহনাতেও নতুনত্ব এসেছে। দীর্ঘদিন কেনাকাটা থেকে দূরে থাকা মানুষ তাই অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এ ঢেউ শুধু নগর বন্দরেই নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট-বাজারেও ছড়িয়ে গেছে।

অর্থনীতিবিদরা জানান, উৎসব কেন্দ্রিক বেচাকেনা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এবার বেচাকেনা দ্বিগুণের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, করোনায় এখন মৃতু্যহার শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। মহামারি এই ভাইরাসটির কারণে গত দু’বছর সব ধরনের উৎসব কেন্দ্রিক বাণিজ্যে ধস নেমেছিল। ভয়াবহ সংকট তৈরি হয় ব্যবসা-বাণিজ্যে। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। মানুষ কেনাকাটার জন্য আগের মতো দল বেঁধে বের হচ্ছেন। ফলে ব্যবসায়ীদের টার্গেট পূরণ হবে। বাজার পর্যবেক্ষকরা জানান, সাত বছর ধরে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈশাখে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরাও পাচ্ছেন ভাতা। এভাবে সামাজিক, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বর্ষবরণের ব্যাপ্তি বাড়ছে।

ফলে বৈশাখ কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের আকার বড় হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা চাঙ্গা করছে। সব মিলিয়ে এবারের বৈশাখী অর্থনীতিতে বাড়তি প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা যোগ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) হিসাব মতে, বৈশাখী উৎসবে আগের কয়েকটি বছরে অর্থনীতিতে ১৪-১৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত যোগ হতো। এবার যোগ হবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-বোনাস বাবদ যোগ হবে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা। ব্যাংক-বিমাসহ অন্যসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বৈশাখী বোনাস হিসেবে যোগ হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

পোশাক খাতে বিক্রির পরিমাণ হবে ১২-১৫ হাজার কোটি টাকা। খাবার ও অন্য কেনাকাটায় ৮-১০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ভোগ্যপণ্যে আরও লেনদেন হবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলোয় প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে তরুণ-তরুণীদের উপচেপড়া ভিড়। পোশাকে লাল-সাদার ঐতিহ্য থাকলেও নকশা ও ধরনে এবার বৈচিত্র্যের সমাহার ঘটেছে। শুধু পোশাকে নয়, উপহার সামগ্রী, শো-পিস ও বিভিন্ন প্রসাধনীর বাজারেও লেগেছে বৈশাখী মাতম। অর্থনীতিবিদরা বলেন, পহেলা বৈশাখ একটা সময় ছিল গ্রাম কেন্দ্রিক উৎসব। এখন এটি সর্বজনীন হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বৈশাখ কেন্দ্রিক পণ্যের বেশিরভাগই গ্রামীণ পণ্য। যে কারণে এ সময়ে বাজারে যে টাকার প্রবাহ বাড়ে তার একটি বড় অংশ যায় গ্রাম। তারা আরও জানান, বৈশাখের কারণে সরকারি- বেসরকারি চাকরিজীবীদের বোনাস (উৎসবভাতা) প্রাপ্তি ও অন্য কারণে কেনাকাটার পরিমাণ বাড়ে। এই বাড়তি টাকা আসায় কিছু মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়ে। এতে মূল্যস্ফীতিতেও কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। সামগ্রিকভাবে বৈশাখে অর্থনীতিতে নতুনভাবে চাঙ্গাভাব নিয়ে আসে। গত কয়েক দিন রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখী পোশাক কিনতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে বৈশাখী পোশাক নিয়ে বসেছেন হকার। ক্রেতাদের চাহিদার জোগান দিতে এ বছর বেড়েছে উৎপাদনও। বিশেষ করে তাঁতবস্ত্র ও কুটিরশিল্প এখন বেশ চাঙ্গা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অনেক প্রতিষ্ঠান বিশেষ ছাড়ও দিচ্ছে। লাল, সাদা, আর হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে রাজধানীর বড় বড় শোরুম, আউটলেট এবং পাড়া-মহলস্নার দোকানপাট। বিক্রেতারা বলছেন, বৈশাখ ও ঈদ কাছাকাছি সময়ে পড়ে যাওয়ায় এবার বৈশাখী পোশাকের ঢঙে আনা হয়েছে নানা পরিবর্তন। একই পোশাক যাতে দুই উৎসবেই মানানসই হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেছেন তারা। সোমবার দুপুর ১২টায় সরেজমিন রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপেস্নক্সে গিয়ে ক্রেতার ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়।

দেশীয় ফ্যাশন হাউস দেশালে বিক্রেতাদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। ক্রেতার হতে পছন্দের পোশাকটি তুলে দিতে ব্যস্ত তারা। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন কেনাকাটা করতে। কেউ আবার একাকী ঘুরে ঘুরে পরিবারের জন্য শপিং করছেন। সব মিলিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণে মুখর শপিংমল। এদিন বিকালে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটের চিত্রও ছিল জমজমাট। ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি থাকায় সন্তুষ্ট বিক্রেতারা। তারা বলেন, বৈশাখী বিক্রি এবার বেশ ভালো। করোনার কারণে গত দুই বছর যে ক্ষতি হয়েছে বেশিরভাগ দোকানি এবার তা পুষিয়ে নিতে পারবে। ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স-এর শোরুমে ঘুরে ঘুরে পছন্দের পোশাক কিনছিলেন কর্মজীবী এক নারী। তিনি বলেন, ‘বৈশাখী শপিং করতেই এসেছি। পছন্দমতো পেলে ঈদের পোশাকও কিনব।’

পোশাকের দাম বেশি মনে হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে দুই বছর ধরে শপিংমলে আসা হয়নি। তাই তুলনাটা করতে পারছি না। তবে অনলাইন অর্ডার দিয়ে পণ্য নিতে ডেলিভারি চার্জ দিতে হয়। সে হিসেবে দাম তেমন একটা বাড়েনি।’ ঈদের শপিং করতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তামিমা হোসেন বলেন, ‘পোশাকের দাম এবার একটু বেশি। দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতির বাজারে বৈশাখী উৎসব কেন্দ্রিক পণ্যের দাম বাড়ায় অনেকেই মনমতো জিনিসপত্র কিনতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এদিকে বৈশাখ ঘিরে দেশে ফুলের ব্যবসাও বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন রাজধানীতে পাইকারি বাজারে ৪০-৫০ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হচ্ছে। পহেলা বৈশাখ ঘিরে ৬০-৭০ লাখ টাকার বাড়তি ফুল বিক্রি হবে বলে ব্যবসায়ী সমিতি আশা করছে। বর্ষবরণ কেন্দ্র করে দই-মিষ্টিসহ বেকারিজাত পণ্যের বিক্রিতেও বেশ ধুম পড়ে যায়। এবারও এর ব্যত্যয় হবে না। পয়লা বৈশাখে হালখাতা করতেন ব্যবসায়ীরা। হালখাতায় ক্রেতাদের মিষ্টি-নিমকি খাওয়ান তারা। বর্তমানে হালখাতা উৎসব রং হারালেও মিষ্টি খাওয়ানোর প্রচলন আছে। ফলে বৈশাখে মিষ্টির দোকানের ব্যবসা চার থেকে পাঁচগুণ বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর