শিরোনামঃ
সিরাজগঞ্জে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষ্যে র‍্যালি প্রদর্শন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে শোকজ পেলেন মমিনুর ছকিনা দম্পতি! থাই ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেশের ওষুধ যাচ্ছে ১৫৭ দেশে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মূল সড়কে বন্ধ হচ্ছে মোটরসাইকেল: বিআরটিএ চেয়ারম্যান গবেষণার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দিল ভারত দিনাজপুরে বাঁশের ফুল থেকে চাল ভাত-পোলাও আগামীকাল দেশের পথে রওনা হচ্ছে এমভি আবদুল্লাহ স্বাস্থ্য বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব সরকারি সুবিধাভোগী নির্বাচনের প্রচারে নামলে প্রার্থীতা বাতিল: ইসি রাশেদা ৯ মে থেকে হজের ফ্লাইট শুরু সবাইকে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে হবে শেখ জামালের আজ ৭১তম জন্মদিন বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চলের ৪৮তম বার্ষিক কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত উল্লাপাড়ায় মহাসড়কে ভ্যান চালকের মৃত্যু সিরাজগঞ্জে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হজ যাত্রীদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত সিরাজগঞ্জে বোতলজাত পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করলেন, এমপি ড. জান্নাত আরা হেনরী বেড়ায় তীব্র গরমে পানি ও খাবার স্যালাইনের শরবত বিতরণ সিরাজগঞ্জে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

দেশেই তৈরি হচ্ছে সিরিশ কাগজ

কলমের বার্তা / ১৬১ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ৫ জুন, ২০২২

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুতের ওপর চাপ কমাতে পণ্য আমদানির বিকল্প খুঁজছে সরকার। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পণ্য আমদানির ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ অবস্থায় শতভাগ আমদানি–বিকল্প নতুন এক শিল্পের সূচনা করেছে আবাসন খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান শেলটেক। তারা দেশে প্রথমবারের মতো সিরিশ কাগজের কারখানা চালু করেছে।

খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে সিরিশ কাগজের বাজারে রাজত্ব করছে জার্মানি। বাংলাদেশে অবশ্য ৭০ শতাংশ সিরিশ কাগজ আসে চীন থেকে। বাকিটা জার্মানি ও সিঙ্গাপুর থেকে। দেশে বছরে ২৫০ কোটি টাকার সিরিশ কাগজ আমদানি করা হয়। আর প্রতিবছর বাজারে প্রায় ২৫ শতাংশ হারে চাহিদা বাড়ছে। সম্ভাবনাময় এই বাজার ধরার অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়েই সিলেটে যাত্রা শুরু করেছে শেলটেকের নতুন কোম্পানি গ্রাইন্ড টেক। কারখানাটিতে আপাতত সীমিত পরিসরে সিরিশ কাগজ উৎপাদন করা হচ্ছে।

গ্রাইন্ড টেক বাংলাদেশে প্রথম সিরিশ কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এটি শেলটেক গ্রুপের একটি কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র  জানায়, তাদের এই কারখানার বার্ষিক সিরিশ কাগজ উৎপাদনের ক্ষমতা ছয় কোটি শিট। আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন করে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ পুরো মাত্রায় উৎপাদন শুরু হতে পারে। ইউরোপীয় প্রযুক্তির কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামালও আনা হচ্ছে ইউরোপ থেকে। কারখানাটিতে সরাসরি ২০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ সিরিশ কাগজ শুকনা ও ভেজা স্থানে ব্যবহারসহ কাপড় ও বেল্ট উৎপাদনে ব্যবহার করা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে শুধু শুকনা স্থানে ব্যবহারের সিরিশ কাগজ উৎপাদন করা হবে। ধীরে ধীরে কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে তাঁদের।

জানতে চাইলে শেলটেক গ্রুপ ও গ্রাইন্ড টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর আহমেদ বলেন, শতভাগ আমদানি–বিকল্প শিল্প হিসেবেই কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে। সিরিশ কাগজ আমদানি নিরুৎসাহিত করে ও দেশীয় শিল্পকে কর মওকুফ সুবিধা দিয়ে সরকার সহায়তা করতে পারে। কারণ, এ খাতে দেশীয় শিল্প দাঁড়ালে বছরে অন্তত ২৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

বাসা থেকে শিল্প, সর্বত্র ব্যবহার

মূলত শক্ত যেকোনো কিছু মসৃণ করে তুলতে সিরিশ কাগজ ব্যবহার করা হয়। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে আসবাব, আবাসন, টেক্সটাইল, লৌহজাত ভারী শিল্প, অটোমোবাইলসহ প্রায় সব খাতেই বিভিন্ন গ্রেড বা ধরনের সিরিশ কাগজের চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের খনিজ বালুর গ্রেড অনুযায়ী সিরিশ কাগজের গ্রেড নির্ধারিত হয়। ৪০ থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যন্ত গ্রেড আছে। যত বেশি গ্রেড, তত মসৃণ বালু। এই খাতের মূল কাঁচামাল খনিজ বালু, আঠা ও বিশেষায়িত কাগজ। সারা বিশ্বে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই কাগজ তৈরি করে।

সিরিশ কাগজ দুই ধরনের। হ্যান্ড স্যান্ডিং বা হাতে ব্যবহার্য এবং মেশিন স্যান্ডিং বা মেশিন অ্যাপ্লিকেশন সিরিশ কাগজ। হাতে ব্যবহার্য সিরিশ কাগজ হলো, ৯ ইঞ্চি বাই ১১ ইঞ্চি সাইজের কাগজের টুকরা। শুকনা ও ভেজা কাজের জন্য ব্যবহার করা হয় আলাদা ধরনের কাগজ। পাশাপাশি কাপড়ের তৈরি টুকরাও পাওয়া যায়, যা বাংলাদেশে ‘ইমেরি’ নামে পরিচিত। অন্যদিকে মেশিন স্যান্ডিং বা মেশিন অ্যাপ্লিকেশন সিরিশ কাগজের মধ্যে রয়েছে ডিস্ক, হুইল, ফ্লিপ, হুপার, বেল্ট (কাগজ ও কাপড়ের) ইত্যাদি।
বর্তমানে সিরিশ কাগজের বিশ্ববাজারের আকার সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের, যা বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ৯০ টাকা ধরে)। প্রতিবছর বিশ্ববাজার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হারে বাড়ে। সিরিশ কাগজের আন্তর্জাতিক বাজারে একচেটিয়া রাজত্ব করছে জার্মানির দুটি বহুজাতিক কোম্পানি ক্লিংস্পো ও বোস। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ বা অর্ধেকটাই ক্লিংস্পোর দখলে। এ খাতে ইউরোপ–আমেরিকার প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে আমেরিকান থ্রি এম, সেন্ট গোভেন ও নর্টন-গ্রাইন্ডওয়েল।

এ খাতে দেশের অন্যতম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এটুজেড এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. জামাল হোসেন বলেন, দেশে সিরিশ কাগজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিজস্ব শিল্প হলে আমদানি না করে দেশীয় পণ্য বিক্রি করা যাবে। এতে দেশের মুদ্রা দেশেই থাকবে।

মুদ্রা পাচার ও শুল্ক ফাঁকি রোধ

দেশে সিরিশ কাগজের বাজার, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে ২০২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক মেলিতা মেহজাবীন একটি সমীক্ষা করেছিলেন। এতে দেখা যায়, শতভাগ আমদানিনির্ভর এই খাতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের (কম দাম দেখানো) মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দেন ব্যবসায়ীরা। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে যাচ্ছে। যেমন ইউরোপে উৎপাদিত এক কেজি সিরিশ কাগজের দাম অন্তত ১০ ডলার। আর চীনের তুলনামূলক নিম্নমানের সিরিশ কাগজের কেজি সাত ডলার। অথচ দেশে গড়ে প্রতি কেজি সিরিশ কাগজের আমদানিমূল্য দুই ডলারেরও কম দেখানো হয়। এভাবে তিন ভাগের এক ভাগ কিংবা পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাম দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছেন আমদানিকারকেরা। দেশে বছরে গড়ে ৭০ লাখ ডলারের সিরিশ কাগজ আমদানি করা হয়।

দুজন আমদানিকারকের সঙ্গে কথা বলেও একই তথ্য পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন,সিরিশ কাগজের ক্ষেত্রে রাজস্ব বিভাগের নির্ধারিত সর্বনিম্ন দাম দেড় ডলার ধরা আছে। তাই বেশি দামে কিনলেও সবাই কাগজে দেড় ডলার দাম দেখিয়ে শুল্ক পরিশোধ করেন।

ওই সমীক্ষা অনুযায়ী সিরিশ কাগজ আমদানির ওপর সব মিলিয়ে শুল্কহার ৩৭ শতাংশ। গত দুই বছরে এই খাতের কাঁচামালের দাম প্রায় শত ভাগ ও জাহাজভাড়া কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। কারণ, আমদানির সময়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ায় দেশে দাম খুব একটা বাড়াতে হচ্ছে না।

আছে রপ্তানির সম্ভাবনাও

বিশ্ববাজারে এ খাতের নিয়ন্ত্রণ ইউরোপের হাতে থাকলেও তারা পুরো চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে চীনা সিরিশের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর মানে বাংলাদেশের সামনে সিরিশ কাগজ রপ্তানির বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সরকারের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা না পেলে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই প্রকল্প দেশে সফল করে তোলা কঠিন বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জানতে চাইলে মেলিতা মেহজাবীন বলেন, সরকারের সুরক্ষা নীতির ফলে দেশে অনেক শিল্প দাঁড়িয়ে গেছে। সিরিশ কাগজ শিল্পেও বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয়ের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সরকারি সহায়তা পেলে অনেকেই এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। তাই আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করে ও আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে এ খাতে দেশীয় শিল্পকে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এটি করা না গেলে দেশের শিল্প টিকবে না।

90


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর