বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
আব্দুল আলীমের মরদেহ দীর্ঘ আড়াই বছর পর ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন অতীতে ঘরে ঘরে চাকরি দেবার নাম করে হাহাকার দিয়ে গেছে রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্রীয় জাকের পার্টির নেতা রবিউল ইসলাম রবি ভাঙ্গুড়ায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু বেনাপোলে বিজিবি-বিএসএফ সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত সলঙ্গায় সেচ্ছাসেবকদলের শীতবস্ত্র বিতরণ গাজীপুরে ৯ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার-১ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিসপ্লে-তে ভেসে উঠেলো ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে আদম ব্যবসায়ী শাহীন ও মশিয়ারের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা সৌদি আরবে অবৈধ অভিবাসী! কুড়িগ্রামে এম আর বি ইকো ব্রিকসকে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা শার্শা সরকারি টেকনিকেল স্কুল এন্ড কলেজ ২ দিনব্যাপি বিজ্ঞান মেলা

সিরাজগঞ্জে কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী’র ১৪২ তম জন্মবার্ষিকী পালিত

আজিজুর রহমান মু্ন্না, সিরাজগঞ্জঃ / ২০৯ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক, বাঙালী মুসলমান সমাজের এবং জাতীয় জাগরণের, অনল প্রবাহের কবি, বলকান যুদ্ধের অগ্রনায়ক সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী’র ১৪২ তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে- বর্ণাঢ্য জ্ঞানগর্ভ আলোচনা সভা ও মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে ।

বুধবার(১৩ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিরাজগঞ্জ শহরের শহীদ এম মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে – সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা’র আয়োজনে – এ জন্মবার্ষিকী- অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল বক্তব্যে রাখেন, বাংলাদেশ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহ আজম ।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্যে রাখেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ক‌বির বিন আনোয়ার, বিশেষ অতিথি বক্তব্যে রাখেন, সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ও সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি হাসিবুল আলম বি‌পিএম, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা, অ্যাডভোকেট আলহাজ্ব কে,এম হোসেন আলী হাসান, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে’র অধ্যক্ষ টি এম সোহেল, সিনিয়র সাংবাদিক আরিফ – উল-দৌলা, সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হেলাল আহমেদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন, জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ।

এ জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে- কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্যমনা, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক বিদ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ বিপুল সংখ্যক সুধীজন ও গুণীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।।

বিভিন্ন পুস্তক ও তথ্য বিবরণী হতে কবি সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন শিরাজী’র সংক্ষিপ্ত জীবনী জানা যায় যে, কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী জন্ম গ্রহণ করেন, সিরাজগঞ্জ টাউনের বাণীকুঞ্জে- ১৮০০ খ্রীস্টাব্দে ১৩ জুলাই ( মতান্তরে ৫আগষ্ট,১৮৭৯ খ্রীস্টাব্দে) তার পিতার নাম হলো মোঃ আব্দুল করিম খন্দকার (১৮৫৬ -১৯২৪) তিনি পেশায় ছিলেন একজন ভেষজ চিকিৎসক এবং তার মাতার নাম হলো মোছাঃ নূরজাহান খাতুন। কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজী সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করায় নামের শেষে তিনি ‘শিরাজী’ বানান লিখতেন। প্রথম দিককার বইতে তাঁর নামের সাথে ‘শিরাজী’ যুক্ত থাকতো।

প্রথম জীবনে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনা লালন করতেন। কংগ্রেসের বিশেষ করে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ ও বাগ্মী নেতা ছিলেন। বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫-১৯১১) বিরোধী আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯১২-১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি মুসলিম ধর্মীয় চেতনায় অধিক পরিমাণে প্রভাবিত হতে থাকেন এবং পরে সম্পূর্ণভাবে মুসলিম পুনর্জাগরণবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
ইসমাইল হোসেন সিরাজীর গদ্য বঙ্কিমচন্দ্রের মতো সংস্কৃতবহুল, কবিতা মধুসূদনের মতো ক্লাসিক রীতির।
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : অনল প্রবাহ (১৯০০), উচ্ছ্বাস (১৯০৭), উদ্বোধন (১৯০৭), স্পেনবিজয় কাব্য (১৯১৪); উপন্যাস: তারা-বাঈ (১৯০৮), রায়নন্দিনী (১৯১৮), ফিরোজা বেগম (১৯২৩); প্রবন্ধ : স্বজাতি প্রেম (১৯০৯), তুর্কিনারী জীবন (১৯১৩), স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা (১৯১৬); ভ্রমণকাহিনি : তুরস্ক ভ্রমণ (১৯২০)।

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী রচিত মুসলিম জাগরণমূলক কাব্য ‘অনল প্রবাহ’ প্রকাশিত হয় ১৯০০ সালে। ‘যা চলে গেছে তার জন্য শোক বৃথা বরং জাতির হৃতগৌরব উদ্ধারের প্রচেষ্টাই মুখ্য’ এই বাণীতে মুসলমানদের দুরবস্থা ও অধঃপতন ব্যক্ত করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও রোষ প্রকাশ করা হয়েছে এই কাব্যটিতে। ‘অনল প্রবাহে’ কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভারত ভিক্ষা’, ‘ভারত বিলাপ’ ইত্যাদি কবিতার সুষ্পষ্ট প্রভাব আছে। ১৩১৫ বঙ্গাব্দে (১৯০৮) পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়। প্রথম সংস্করণে কবিতা ছিল মাত্র নয়টি। এগুলো হচ্ছে- অনল-প্রবাহ, তুর্যধ্বনি, মূর্চ্ছনা, বীর-পূজা, অভিভাষণ : ছাত্রগণের প্রতি, মরক্কো-সঙ্কটে, আমীর-আগামনে, দীপনা, আমীর-অভ্যর্থনা। ১৯০৯ সারের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালনি বাংলা সরকার গ্রন্থটি বাজেয়াপ্ত করেন এবং ১১৭, ১২৪ (ক), ১৫৩ ধারা অনুসারে গ্রন্থাকারের প্রতি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে পলাতক সিরাজীকে ধরিয়ে দেবার জন্য ৫০০ টাকা পুরস্কার ঘোষিত হয়্ ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্বেষ ও প্রচারণার অভিযোগে দুবছর কারাদ- ভোগ করে ১৯১২ সালের ১৪ই মে তিনি কারামুক্ত হন। তাঁর রচিত ‘কারা-কাহিনী’ মূলত এ জেল-জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে রচিত।

কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজী মহাকাব্য লিখতে চেয়েছিলেন ‘স্পেনবিজয় কাব্যে’ (১৯১৪) মুসলিম বীর তারেক ও স্পেনের সম্রাট রডারিকের সংগ্রামের কাহিনি বর্ণনার মাধ্যমে মুসলিমদের অতীত বীরত্বপূর্ণ অধ্যায় নতুন করে তুলে ধরা হয়েছে। বৈশিষ্ট্যের বিচারে এটি পরিপূর্ণ মহাকাব্য হয় নি।
বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’র প্রতিক্রিয়ায় সিরাজী ‘রায়নন্দিনী’ লেখেন। ‘দুর্গেশনন্দিনী’তে একটি প্রসঙ্গ আছে, হিন্দু সুদর্শন যুবক জগৎ সিংকে দেখে মুসলিম নারী আয়েষা মুগ্ধ হয়। এইটুকুর প্রতিক্রিয়ায় সিরাজী পুরো উপন্যাস লিখে ফেরেন। ‘রায়নন্দিনী’তে ঈশা খাঁকে দেখে কেদার রায়ের কন্যা স্বর্ণময়ীকে দিয়ে শুধু মুগ্ধতা নয়, ইসলামধর্ম গ্রহণ করিয়ে বরমালা প্রদান করানো হয়্ উপন্যাস হিসেবে ‘রায়নন্দিনী’ ব্যর্থ। তবে প্রতিক্রিয়ার ইতিহাসে এই নামটি স্মরণ করতে হয়। উপন্যাসটির শেষ বাক্য : ‘বহুতর উচ্চশ্রেণীর ব্রাহ্মণ-পরিবার ক্রমশঃ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।’

তিনি ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জুলাই মৃত্যু বরণ করেন এবং চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন সিরাজগঞ্জ শহরের বাণিকুঞ্জে


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর