বেতাগীতে কৃষি অফিসে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে কার্যক্রম
উপকূলীয় বরগুনার বেতাগী উপজেলা একটি কৃষি প্রধান জনপদ। শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত এ উপজেলায় ধানের পাশাপাশি প্রচুর সবজিরও চাষ হয়ে থাকে। এ উপজেলার ধান, মুগ. খেসারি ডাল, করল্লা, টমোটো, শসা, শিম, ঢেড়স, কাঁচা মরিচ সহ নানা রকম কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয় এবং কম-বেশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় রফতানি করা হয়।
তবে এখানকার কৃষিতে ব্যাপক সফলতা অর্জন করার সম্ভাবনা থাকলেও উপজেলা কৃষি অফিসের জনবল সংকটের কারণে তা অনেকটাই সম্ভব হচ্ছে না বলে স্থানী কৃষকরা জানান। সরকার তৃণমূল পর্যায়ে কৃষিখাতকে শক্তিশালী করতে কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনা ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করে আসলেও শুধুমাত্র জনবল সংকটের কারণে তা বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগকে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
শুধু তাই নয়, এ কারণে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে কৃষি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এতে ব্যাহত হচ্ছে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যক্রমও। এছাড়া কৃষক কার্ড থেকে শুরু করে সার, বীজ ও বিভিন্ন কৃষি উপকরণ কৃষকের মধ্যে বিতরণেও প্রতিনিয়ত বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। এখানে মোট কৃষক পরিবার রয়েছে ২৪ হাজার ৪৯৫ এবং ১২ হাজার ৫৯৭ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। এসব ভূমি ব্যবস্থাপনা, বীজ, সার, কীটনাশকসহ ফসলের রোগবালাই, পোকা-মাকড় নিধন ও উন্নত ফলনশীল জাতের উৎপাদনে কৃষকদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি বিভাগ পরিচালনার জন্য ৩৮টি পদ থাকলেও এখানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন। বাকি ২৪টি পদই শূন্য রয়েছে। শূন্য পদগুলোর মধ্যে-অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা একজন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা একজন, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ১৭ জন। উচ্চমান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক একজন, স্প্রেমেকানিক একজন, পিপিএম দুইজন ও গার্ড একজন।
গুরুত্বপূর্ণ এসব পদগুলো শূন্য থাকায় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটির সুফল ভোগ করতে পারছেন না উপজেলার কৃষক পরিবারগুলো। ফলে ফসল উৎপাদনে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা। এসকল শূণ্যপদ পূরণের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ বছরের ২৫ জুলাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের মাধ্যমে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে আবেদন করে। এ আবেদনের পরেও দুই জন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে এখান থেকে বদলি করা হয় উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের খন্তাকাটা লক্ষীপুরা গ্রামের কৃষক মো: শাহাজাহান হাওলাদার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এখানে ধান যেমন বেশি হয়, তেমনি নানা রকম শাকসবজিও বেশি উৎপাদিত হয়। কিন্ত এখানে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নেই। ফলে সমস্যায় পড়লে অন্য কর্মকর্তাকে খুঁজে বের করে পরামর্শ নিতে হয়।
বিবিচিনি ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ইউনিয়নে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার তিনটি পদের মধ্যে দুইটিই শূন্য। তাই সব কাজ আমার একাই করতে হচ্ছে। একা কাজ করতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় শুক্রবার-শনিবার ছুটির দিন হলেও সকাল-সন্ধ্যা কৃষকের সঙ্গে কাজ করতে হয়।
বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: ইছা সঙ্গে কথা হলে জনবল সংকটের কারণে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পদ শূন্য থাকায় সবাইকে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের মাধ্যমে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।