নির্মাণাধীন সড়ক ভেঙে দিলো নারী জনস্বার্থে সড়ক নির্মাণে এলাকাবাসীর অবস্থান
জনস্বার্থে নির্মিত সড়ক রাতের আঁধারে কুপিয়ে ভেঙে ফেলেছে রঞ্জনা খাতুন। তিনি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গাড়াবেড় গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ মাস্টারের তৃতীয় স্ত্রী। ক্ষোভ তার ব্যক্তিগত ফসলি জমির মধ্যদিয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সাংবাদিকদের দিয়ে মিথ্যা সংবাদও প্রকাশ করা হয়েছে। গত রোববার একটি জাতীয় দৈনিকসহ কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘গাড়াবেড় গ্রামের ইউপি সদস্য এরশাদ হোসেন তার ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করছেন রঞ্জনার ফসলি জমির মাঝ দিয়ে। রাস্তা নির্মাণে বাঁধা দিলে গ্রামবাসি তাকে সমাজচ্যুত করে।’
সোমবার দুপুরে গাড়াবেড় মৌজায় সড়কটি নির্মাণের দাবীতে খেতে অবস্থান নেন গ্রামবাসি। সরেজমিন স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের দাবী ছিল এ সড়কটি নির্মাণের। ফসলি জমির উৎপাদিত ফসল আনা-নেয়া করার জন্য সড়কটি এবার নির্মাণ করা হচ্ছে। ২৫০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রায় ৮ফুট চওড়া সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে কাবিটা প্রকল্পের আওতায়।
সড়ক নির্মাণের দাবীতে অবস্থান নেয়া বাদশা মাতবর বলেন, গ্ৰামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো, রাস্তাটি হলে এই চরায় কৃষি বিপ্লব ঘটবে। চাষি আলী আকবর বলেন, রাস্তা হলে সার বীজ ও কৃষি পণ্য বয়ে নিতে সুবিধা হবে, খরচ কমবে, বর্তমানে এই চরায় কোনো কাজের লোক কাজ করতে চায়না, অতিরিক্ত মজুরী দাবী করে। একইরকম বক্তব্য শহিদুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, আয়নাল হকসহ উপস্থিত কয়েকশ মানুষের। রঞ্জনার সৎ ছেলে সোহাগ ও সৎ মেয়ে সুরাইয়া জানায় তাদের বাবার পেনশনের টাকা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, বিবাদী জমির মালিকানা দাবি করে রাস্তা নির্মাণের পক্ষে অবস্থান নেন।
সড়কটি ভেঙে ফেলা রঞ্জনা খাতুন বলেন, জমির মাঝে দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে দেয়া হবেনা, বিষয়টি উল্লেখ করে ইউএনও বরাবরে দরখাস্ত করেছিলাম, তিনি বলেছেন রাস্তার পাশে কমপক্ষে ২০ ফুট জমি না থাকলে রাস্তা ভেঙ্গে দিতে, আমি রাস্তা ভেঙ্গে দিয়েছি। সমাজচ্যুতির বিষয়ে তিনি জানান রাস্তাঘাট, বাজারে চলাচলে বা বাড়িতে থাকতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য এরশাদ হোসেন বলেন, রঞ্জনা একজন কলোহ প্রিয় মহিলা, তাকে নিয়ে একাধিক গ্ৰাম্য সালিশী বৈঠক হয়েছে, এ ছাড়াও সে আদালতের একাধিক মামলার বাদী ও বিবাদী। ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দে ব্যক্তিগত রাস্তা করার সুযোগ নেই, গ্ৰামের কয়েক’শ কৃষিজীবী মানুষের জনস্বার্থ বিবেচনায় রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান মুকুল বলেন, স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে গ্ৰামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের কাবিটা প্রকল্পের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে। বিষয়টি সংসদ সদস্য পর্যন্ত অবগত আছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন প্রয়োজনে আরো বরাদ্দ দেবেন। রাস্তাটি কৃষিকাজে বিশেষ অবদান রাখার পাশাপাশি চালিতাডাঙ্গা এবং সোনামুখী ইউনিয়নকে সংযুক্ত করবে, স্থানীয়দের ৪/৫ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরতে হবে না। সমাজচ্যুতির বিষয়টি তিনি অবগত নন।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার বলেন, জনস্বার্থে নির্মাণাধীন রাস্তা ভাঙ্গা কাম্য নয়, সমাজচ্যুতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে গাড়াবের পশ্চিমে স্থলবাড়ী, উত্তরে রসিকপুর এবং দক্ষিণে চালিতাডাঙ্গা গ্ৰাম মাঝে রয়েছে প্রায় ৫ থেকে ৬শ বিঘা আবাদি জমির প্রান্তর। জলাবদ্ধতার কারনে দীর্ঘদিন এই চরায় এক ফসল চাষ হতো। সম্প্রতি বিএডিসির পানাসী প্রকল্পের মাধ্যমে খাল খনন করা হলে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে, ফলে এই এলাকার ৫ শতাধিক কৃষক ৩ ফসলের স্বপ্ন দেখছেন। বিশাল এই চরায় কৃষিকাজে ব্যবহ্নত সামগ্রী ও উৎপাদিত কৃষি পণ্য পরিবহনে সুবিধার্থে স্থানীয় কৃষক ও কৃষিজীবীদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাবিটা প্রকল্পের আওতায় কাঁচা সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ। সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে রাতের আঁধারে লোকবল নিয়ে রঞ্জনার নেতৃত্বে তার জমির অংশের সড়ক কেটে সমান করা হয়। সড়ক নির্মাণে কয়েক শত জমির মালিক জায়গা ছাড়লেও রঞ্জনা রাজি নন বলে জানান।