বেনাপোলে শীতের শুরুতেই পিঠা খাওয়ার ধুম
মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি: বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায় এখনো অগ্রহায়ন। তবে বিগত কয়েকদিনে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। যশোর বেনাপোলঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। নবান্ন শুরু হয়েছে আরও কিছুদিন আগে। গ্রামাঞ্চলের গোলাতে নতুন ধান। সেখানে শুরু হয়েছে চালের গুড়া তৈরি ও পিঠা পায়েশ খাওয়ার ধুম। সে হাওয়া বইছে ব্যস্ত নগর জীবনেও। বেনাপোল পৌরবাসী পিঠা তৈরির ফুরসত না পেলেও পিঠার স্বাদ নিতে ভোলেন না। তাই শীতের শুরুতেই বেনাপোল চলছে পিঠা বানানো ও পিঠা খাওয়ার ধুম।
পিঠা আর বাঙালি একসূত্রে গাঁথা। তাই সারা বছর রেস্টুরেন্টগুলোতে ফাস্ট ফুড, চাইনিজ, থাই, ইটালিয়ান, রাশিয়ানসহ বিদেশি খাবারের পেছনে ছুটলেও শীতের মৌসুমে পিঠার কথা ভোলেন না রসনা প্রিয় নগরবাসী। গেলো কিছুদিন ধরেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে। তাই শীতের শুরতেই গোটা শার্শা উপজেলা বিভিন্ন বাজার, ব্যস্ত সড়কের পাশে, পাড়া মহল্লার দোকানে চলছে পিঠা বানানোর ধুম। কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন পিঠা বানাতে। এসব দোকানে দুপুরের পর থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে পিঠা তৈরির আয়োজন। চালের গুড়া, গুড়, নারকেলসহ পিঠা তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে দোকানে দোকানে কারিগররা ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। কাস্টমারদের কেউ কেউ দোকানে বসেই নিচ্ছেন পিঠার স্বাদ, আবার কেউবা পার্সেল নিচ্ছেন পরিবার পরিজনের জন্য। শেষ বিকেল থেকে মাঝ রাত অবধি চলছে পিঠা বানানো আর খাওয়া, বিক্রিও হচ্ছে বেশ।
পিঠা বানানোর এ আয়োজন দেখা যাচ্ছে বেনাপোল বাজারে বিভিন্ন সুপারশপেও। স্বপ্ন, ওরিয়েন্টেও বানানো হচ্ছে পিঠা। সেখানেও ভোজন রসিকরা আসছেন পিঠার স্বাদ নিতে। পিঠা তৈরির যে আয়োজন শুরু হয়েছে কার্তিক মাস থেকেই তা চলবে পুরো পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র্য মাস জুড়ে। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠার পাশাপাশি কোন কোন দোকানে আবার পাটিসাপটারও দেখা মিলছে। চিতই পিঠা বা কাঁচি পোড়ার সাথে ধনিয়া পাতা, শুটকি, কাঁচামরিচ, রসুন পেঁয়াজের বাহারি সব চাটনি দেয়া হচ্ছে। অনেক পিঠার দোকানে আবার বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য পিঠার অর্ডারও নেয়া হয়। শাশা উপজেলা বেনাপোল,বাহাদুরপুর, শার্শা, নাভারণ, উলশি, বাগআচড়া, কায়বা,পুটখালী, লক্ষণপুর, নিজামপুর,ডিহিসহ বিভিন্ন এলাকা ও পাড়া মহল্লার দোকানে শেষ বিকেল থেকে রাত ১০টা ১১টা পর্যন্ত পিঠার দোকানগুলো খোলা থাকছে।
কুড়ি বছর এলাকায় পিঠার ব্যবসা করেন জহুরুন নেছা। তিনি বলেন, এক সময় একাই পিঠা বানাতাম। এখন বয়স হয়েছে, আমি ছাড়াও আমার ছেলে ও চার কর্মচারী মিলে দোকান সামলাই। ঘরে বসে থাকতে ভালোলাগে না। মানুষ আমার দোকানে আসে, আমার খুব ভালোলাগে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেন পিঠা বানাতে পারি।
পিঠা বানিয়ে সংসার চালিয়ে আসছেন স্বামী পরিত্যক্তা শারমিন সুলতানা।বেনাপোল রেল স্টেশন এ পিঠার কারিগর বলেন, পিঠার এ দোকানের পাশাপাশি বাসা বাড়িতেও কাজ করি। আল্লাহর রহমতে এখন ভালো আছি। স্বামী পরিত্যক্তা বা অসহায় নারীরা বসে না থেকে কোন না কোন কাজ করা উচিত।
বাগআছড়া পিঠার কারিগর ফেরদৌসী বেগম বলেন, প্রতিদিন ১৫ কেজি চালের গুড়ার পিঠা বানাতে হয়। দিন দিন কাস্টমার আরো বাড়ছে। বাড়িতে না পারুক, আমাদের কাছ থেকেই মানুষ পিঠা কিনুক, পিঠা খাওয়া যেন মানুষ ভুলে না যায়।
বেনাপোল রেলস্টেশন রোড এলাকার শাহীনুর রহমান বলেন, রেল স্টেশনে অফিস হওয়াতে পিঠার দোকানের সামনে দিয়ে রোজ আসা যাওয়া করতে হয়, প্রায়ই এখানে পিঠা খেতে আসি। পিঠা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। আমরা যত ব্যস্তই থাকি না কেনো, শীত এলে পিঠার স্বাদ না নিলে চলে না।
উপজেলা নাভারন এলাকার আবু বকর বলেন, নিজে তো পিঠার দোকানে আসিই, পরিবারের সদস্যরাও আসে। পিঠা না খেলে শীতকাল জমে ওঠে না।
উলশি এলাকার জিনাত রেহানা বলেন, পিঠা খেতে খুব ভালোলাগে, ব্যস্ততার কারণে বাড়িতে এখন আর আগের মতো পিঠা বানানোর আয়োজন করা হয় না। নিজের জন্য এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য তাই পিঠার দোকানেই আসতে হয়।