আশরাফুল হক, লালমনিরহাট : অনেক স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরবে কোম্পানির চাকরির আশায় পাড়ি জমিয়েছেন লালমনিরহাটের রাজু মিয়া (২৫)। আদম ব্যবসায়ী শাহীনুর ইসলাম শাহীনের প্রবাসী দালাল চক্রের হাতে রাজু মিয়া শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অবৈধ অভিবাসী হয়ে সৌদি আরবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ প্রতারণার ঘটনায় আদম ব্যবসায়ীর শাহীনুর ইসলাম শাহীন ও মশিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার বিবরণ ও রাজু মিয়ার পরিবার জানায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের খুনিয়াগাছ চওড়াপাড়া প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের নিম্নবিত্ত পরিবারের আশরাফুল হকের ছেলে রাজু মিয়া। বেকার অবস্থায় থাকার সুবাদে পাশ্ববর্তী আদিতমারী উপজেলার ভাদাই আনন্দ বাজার এলাকার ফজলু দেওয়ানীর ছেলে মশিয়ার রহমান রাজু মিয়াকে ৬ লক্ষ টাকায় পাসপোর্ট ও ভিসা সহ সৌদি আরবে কোম্পানির চাকরির প্রলোভন দেন। তার মাধ্যমে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দ্রাহবি এলাকার আবু তালেবের ছেলে আদম ব্যবসায়ী শাহীনুর ইসলাম শাহীন হাতে ধার-দেনা, জমি বন্ধক, এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চার দফায় ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা স্থানীয়দের সম্মুখে প্রদান করেন। পরর্বতীতে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই রাজু মিয়াকে আদম ব্যবসায়ী শাহীনুর ইসলাম শাহীন ঢাকা বিমানবন্দর থেকে সৌদিআরব পাঠান। ১০/১৫ দিন পর রাজুর বড় ভাই আশেদুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার খোঁজখবর জানতে চাইলে রাজু কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সৌদি আরবে ভালো কোম্পানিতে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে আদম ব্যবসায়ী শাহীনুর ইসলাম শাহীন দালাল চক্রের কাছে দেন।

সেখানকার দালালদের শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন শিকার হচ্ছে রাজু মিয়া। এমনকি কাজ নেই, থাকা ও খাওয়ার কষ্ট সহ কোনো কোনো দিন শুধু পানি খেয়ে রাজু মিয়া অবৈধ অভিবাসী হয়ে সৌদি আরবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে দাবী তার পরিবারের। এ ঘটনায় রাজু মিয়ার বড়ভাই আশেদুল ইসলাম বাদী লালমনিরহাটের বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে আদম ব্যবসায়ী শাহীনুর ইসলাম শাহীন ও মশিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী আশেদুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক ও এনজিও থেকে লোনসহ নানান জনের কাছ থেকে ধারদেনা করে দালাল মশিয়ারের মাধ্যমে আদম ব্যবসায়ী শাহীনের হাতে ৫লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা দিয়েছি। আমার ছোট ভাই রাজুকে সৌদি আরবে কোম্পানিতে চাকরি দিবেন। ৪/৫ মাসেও চাকরি তো দুরের কথা ভাই আমার দুই বেলা খেতেও পারে না। পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিদেশের মাটিতে। আমার ভাইকে সুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দফায় দফায় স্থানীয় ভাবে সালিশ বৈঠক হয়েছে। উল্টো আমাদেরকে হুমকি ধামকি সহ নানান ধরণের ভয়ভীতি দেখান। তাই আদম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আদালত ন্যায় বিচার করবেন আশা করি।

উল্লেখ্য যে, শুধু রাজু মিয়া নয়, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাট বানিনগর এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারে মন্তাজ আলীর ছেলে আঃ হামিদ ও একই গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে লাল মিয়া আদম ব্যবসায়ী শাহীনুর ইসলাম শাহীন মাধ্যমে সৌদি আরবে ভালো কোম্পানিতে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সৌদি আরবে কোম্পানির চাকুরী তো দুরের কথা দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখানে দালাল চক্রের সদস্যরা নানাভাবে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করতো। পরে জীবন বাঁচাতে পুনরায় বাড়ি থেকে টাকার পাঠালে দেশে ফেরত আসেন। দেশে ফেরে এলে পাওনাদাররা টাকার চাপ দিলে দিশেহারা অবস্থায় আদম ব্যবসায়ী শাহীনুর ইসলাম শাহীনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি টাকা দিতে নানান টালবাহানা করায় লালমনিরহাট সেনা ক্যাম্পের অভিযোগ দায়ের করেন।

এ বিষয়ে আদম ব্যবসায়ী শাহীনুর ইসলাম শাহীন-এর কাছ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি রাজু সহ তিনজনকে বৈধভাবে সৌদিআরবে পাঠিয়েছি। তারমধ্যে দুইজন বিদেশে থাকতে না পেরে দেশে চলে এসেছে। এখন দেশে ফিরে আমার কাছে টাকা দাবি করছে। তবে রাজু সৌদিআরবে ভাল আছে। সেখানে কাজ করছে। রাজু কি কাজ করছেন আর কোথায় আছেন এমন প্রশ্নে জবারে আদম ব্যবসায়ী কিছুই বলেনি।