মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ বন বিভাগের বাগান মালি হাসেম আলীর বিরুদ্ধে

গাজীপুরের কালিয়াকৈর রেঞ্জের আওতাধীন চন্দ্রা বন অফিসে দায়িত্বরত আছেন বন বাগানের মালি হাসেম আলী মাতবর। সাবেক এক উধ্বর্তন বন কর্মকর্তার (সিসিএফ) আত্মীয় পরিচয়ে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন তিনি। তার দাপটে কোণঠাসায় রয়েছে কালিয়াকৈর রেঞ্জের আওতাধীন চন্দ্রা বন অফিসে কর্মরত অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। তার বিষয়ে কোন কিছু জানতে চাইলে ভয়ে এড়িয়ে যান সবাই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসেমের নেতৃত্বে বনের জমি জবর-দখল করছে ভূমিদুস্যরা। দালালদের মাধ্যমে বনের জমিতে থাকা অসহায় মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা দাবি করেন এই হাসেম আলী। টাকা না দিলেই অভিযান চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় ঘরবাড়ি। শুধু তাই নয় মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উপজেলার সিনাবহ এলাকার দলিল উদ্দিন দুলু জানান,ঈদুল ফেতরের আগের দিন ঢাকা বন বিভাগ উচ্ছেদ অভিযান চালায় এই এলাকায়। এতে প্রায় শতাধীক ঘর বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়। যার বেশির ভাগই এস এ এবং সিএস মূল্যে মালিক শুধুমাত্র আর এস রেকর্ড ভুলবশত বন বিভাগের নামে উঠেছে। এবিষয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি। চন্দ্রা বিট অফিসে জমির কাগজপত্র সাবমিট করেছে এ সময় বনের মালিক হাসিমালি মাতব্বর এবং বিট কর্মকর্তা ইকবাল কাগজপত্র না দেখেই ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে বিট কর্মকর্তা ইকবাল হাসেম আলী মাতব্বরের মাধ্যমে আমার কাছে দুই লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযানের তালিকায় আমার বাড়ির নামটিও তালিকা বদ্ধ করে এবং উচ্ছেদ চালায়।
আরেক ভুক্তভোগী লাবিব উদ্দিন লেবু জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে অর্থাৎ এক থেকে দেড় শত বছর যাবত আমরা এই স্থানেই বসবাস করছি আমার বাপ দাদার নামে দুটি রেকর্ড রয়েছে ভুলবশত বনের নামে একটি রেকর্ড হওয়ায় আমরা রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেছি। চন্দ্রা বিট অফিসের মালি হাশেম আলী মাতব্বর আমার কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে টাকা দিতে না পারায় আমার বহুতল ভবনসহ আমার পুরাতন বাড়িঘর সবই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় কিন্তু আশেপাশে অনেকে বনের জমিতে বন উজার করে নতুন বাড়ি ঘর করলে টাকার বিনিময় সেই স্থাপনা গুলো রেখে চলে যায় তারা।
জানা যায় নানা অপকর্মের দায়ে চাকরি থেকে একাধিক বার বরখাস্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে মাস না যেতেই কোন এক অদৃশ্য শক্তিতে চাকরিতে পূর্ণ বহাল হয় এই বাগান মালি। এছাড়াও নিজের ইচ্ছে মতই কর্মস্থল নির্ধারণ করে বহু বছর যাবত গাজীপুরেই বিভিন্ন বন বিটে চাকরি করেন হাসেম আলী । তার ভয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তাকে কিছুই বলতে পারেনা। সামান্য মালি পদে চাকরি করে গাজীপুরের মনিপুর এলাকায় তৈরি করেছেন বহুতল দুটি ভবন। শুধু তাই নয় মনিপুর এলাকায় বনের জমি দখল করে নিজ নামে গড়ে তুলেছেন একটি মসজিদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সাবেক সিসিএফ ইউনুস আলী হাসেম আলী মাতবরের আত্মীয় তাই তাকে কেউই কিছু করতে পারে না। প্রায়ই সে অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে।
সাংবাদিকদের সাথেও খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সে নিজেই স্বীকার করেন এর আগেও দেশের সকল মিডিয়ায় তার নিউজ হলেও কেউই কিছু করতে পারেনি।
হাসেম আলী মাতাব্বরের বিষয়ে বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা বক্তব্য না দিলেও কালিয়াকৈর উপজেলা বন বিভাগের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
বন রক্ষার দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তারাই যদি বন ধ্বংসের কারন হয় তাহলে দ্রুত বন ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। তাই এই ধরনের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচরী কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জনসাধারণের।