কাজিপুরে শিক্ষকের প্রলোভনসঙ্কুল আচরণ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা: ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়
কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: কাজিপুর উপজেলার অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিমুলদাইড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর সঙ্গে প্রলোভনসঙ্কুল আচরণ ঘটনা ধামাচাপা দিতে জোর চেষ্টায় নেমেছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ। ঘটনার পরদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে সালিশ বসিয়ে একক সিদ্ধান্তে অভিযুক্ত শিক্ষককে বহিষ্কার করেছেন তিনি। অভিযুক্ত খন্ডকালীন শিক্ষক আব্দুল হালিম এর আগেও একই আচরণের দায়ে এই বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন। চারিত্রিক ও নৈতিক স্খলন আক্রান্ত বহিষ্কৃত শিক্ষককে পুণরায় নিয়োগ, ইচ্ছে মতো বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে অশোভন আচরণ, অশ্রাব্য গালিগালাজ, বিদ্যালয়ে কোচিং ক্লাসের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়, শিক্ষিকা ও অপছন্দের শিক্ষকদের হয়রানি, আত্মীয় স্বজনদের খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগসহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, অভিভাবক এবং স্থানীয় জনসাধারণ। এ ঘটনায় এলাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, সেখানে প্রধান শিক্ষকের নীতি নৈতিকতা, আদর্শ, যোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন জন মন্তব্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা।
জানা যায়, গত ২৬ জুন বুধবার খন্ডকালীন শিক্ষক আব্দুল হালিম বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সাথে প্রলোভনসঙ্কুল আচরণ করেন, এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে অভিযোগ তোলা হয়, পরদিন ২৭ জুন বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে সকাল ১১ টায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় হঠাৎ ছুটি ঘোষণা করে তৎক্ষণাৎ সালিশী বৈঠকের আয়োজন করেন, বৈঠকে পক্ষ বিপক্ষ থাকলেও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বা সদস্য কিংবা স্থানীয় মুরব্বি অথবা গণ্যমান্য ব্যক্তি কেউই উপস্থিত ছিলেন না। প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ নিজেই বিচারপতি হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষককে বহিষ্কারের রায় দেন এবং তৎক্ষণাৎ তা কার্যকরী করেন।
সঙ্গত কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষিকা জানান, প্রধান শিক্ষক একজন বদমেজাজি মানুষ, কথায় কথায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, মান সম্মান নিয়ে টিকে থাকা দায়। স্থানীয়রা জানান, খন্ডকালীন শিক্ষক পদে
একাধিক অযোগ্য আত্মীয়কে চাকরি দিয়েছেন তিনি। বেশ কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষককে অহেতুক প্রহার করেন, এ ঘটনায় মামলা হলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে মিমাংসার নামে মামলা তুলতে বাধ্য করান। প্রান্ত নামের এক এতিম শিক্ষার্থীকে বেতন বিলম্বে দেয়ার অজুহাতে বেদম প্রহার করলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রচলিত নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছেমতো বিদ্যালয় পরিচালনা করেন তিনি, প্রতিবাদ করলেই মেলে অশোভন আচরণ এবং অকথ্য গালিগালাজ। শিক্ষকের বহিষ্কারের আদেশ কপি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, এতে করে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তি, প্রাক্তন ছাত্র, ও প্রতিক্রিয়াশীল ফেসবুকাররা বিদ্রুপ, ঘ্রীনা ও অবজ্ঞা পূর্ণ মন্তব্যে মূখর রয়েছেন, শিক্ষকের চারিত্রিক ও নৈতিক স্খলন বিষয়টি জাতির জন্য কি বার্তা দেয় এমন গভীরের বিষয়গুলো তুলে ধরছেন তারা।
ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফের বক্তব্যে তার স্বেচ্ছাচারিতা এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রচলিত তথ্যের মিল পাওয়া যায়, ঘটনার স্বীকারোক্তিসহ বলেন, বাংলা বিষয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক আব্দুল হালিম ৭ম শ্রেনীর এক ছাত্রীর গায়ে হাত দিয়েছিল, যার কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, আমি পারলে কমিটিকে জানাবো কেনো, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আমার আছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া খন্ডকালীন শিক্ষককে বহিষ্কার করা যাবে কিনা, রেজুলেশন করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরের পরিবর্তে তিনি সাংবাদিকদের টাকার বিনিময়ে চুপ থাকার অনুরোধ জানান, সাংবাদিকরা রাজী না হওয়ায় তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন,”যা পারেন কইরেন”। ঘটনার প্রেক্ষিতে এবং প্রধান শিক্ষকের এখতিয়ারে প্রশ্নে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা একাডেমিক সুপারভাইজার আতিকুর রহমান বলেন, এ ভাবে বিদ্যালয় ছুটি দেয়ার এখতিয়ার প্রধান শিক্ষকের নাই, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় ম্যানেজিং কমিটির সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ঘটনার বিষয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বেলাল বলেন, প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় শিক্ষক অভিভাবক সবাই অতিষ্ঠ, অভিযোগের শেষ নেই, কোনো বিষয়েই কারো সাথে আলোচনা করে না, নিয়মিত মিটিং করে না, বিচারের বিষয়ে আমাকে কিছুই বলে নাই, কাউকে পরোয়া করে না, তার অযোগ্যতার কারণে একই ধরণের ঘটনা বার বার ঘটছে, ছাত্রী অভিভাবকদের নিরাপত্তা শংকায় ফেলেছে, যা, বিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত অমঙ্গলের, অভিযুক্ত খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ ও বহিষ্কার কোনটাই আমি অবগত না, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।