পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল, দুর্ঘটনায় সব চুরমার হয়ে গেল’
সাত বছর প্রেমের পর দুই বছর আগে শান্তা আক্তারের সাথে বিয়ে হয় সাগর জোমাদ্দারের সাথে। বিয়ের পর মাত্র দুই মাস একসাথে সংসার করেছেন তারা। এরপর ভাগ্য পরিবর্তনে সৌদি প্রবাসী দুলাভাইয়ের রেস্টুরেন্টে কাজে যোগ দেন সাগর।
আগামী বছর দেশে ফিরে প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য নতুন বাড়ি বানাবেন। এমনই কত স্বপ্ন ছিলো সাগরের। কিন্তু তার আগেই সড়ক কেড়ে নিয়েছে তার স্বপ্ন। শুধূ সাগরই নয়, দুলাভাই মোজাম্মেল হোসাইনের অকালমৃত্যুতে তাঁদের ঘিরে পরিবারের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাগর ও তার দুলাভাই মোজাম্মেল হোসাইন। এমন মর্মান্তিক ও করুন পরিনতির মুখোমুখি হতে হবে, তা কখনোই ভাবতে পারেননি তাঁদের পরিবার।
গত শনিবার ওমরাহ শেষে মদিনা থেকে কর্মস্থল আল কাসিমে ফেরার পথে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। তাদের মরদেহ বর্তমানে সৌদি আরবের একটি সরকারি হাসপাতালের মর্গে রাখা রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুজনের মরদেহ বাংলাদেশে আনার চেষ্টা চলছে। তাদের মৃত্যুর খবরে দুই পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত সাগর জোমাদ্দারের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের বটতলা গ্রামে। তিনি ওই এলাকায় মোতাহার জোমাদ্দারের ছেলে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সাগর সবার ছোট। অন্যদিকে তার দুলাভাই মোজাম্মেল হোসাইনের(৪৫) বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছৈলাবুনিয়া গ্রামে। সে ঐ এলাকার মৃত আজিজ মৃধার ছেলে। ২৩ বছর আগে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সবশেষে ৮ বছর আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার সরেজমিনে মোজাম্মেল হোসাইনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় দূর্ঘটনার ৪দিন পরেও এখনোও স্বজনদের আহাজারি। শোকস্তব্ধ পুরো বাড়ি। বাবার (মোজাম্মেল) কথা মনে করে আহাজারি করছিলেন ছোট মেয়ে অন্তু আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী রুবিনা ইয়াসমিন। খানিকটা দূরে নির্বাক বসে আছেন সাগরের স্ত্রী শান্তা আক্তার। ছেলে ও মে জামাইকে হারিয়ে হারিয়ে বিলাপ করছেন মোতাহার জোমাদ্দার।
মোজাম্মেল জোমাদ্দারে স্ত্রী রুবিন ইয়াসমিন বলেন, ২৩ বছর আগে ব্যবস্যা করতে আমার স্বামী সৌদি আরবে গিয়েছিল। ৮ বছর আগে সবশেষে দেশে এসেছিল সে। ছেলে মেয়ে মানুষের মতো মানুষ করবে। সকলের জন্য কেনা কাটা করে আগামী বছর দেশে আসার কথা ছিলো তার। কিন্তু তার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেল। এখন সরকারের কাছে আবেদন সরকারি সহায়তায় তাদের লাশ যেন দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়।
মোজাম্মেলের ছোট মেয়ে রানিম জাহান অন্তু বলেন, আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার বাবা সৌদি গিয়েছে। ৮ বছর হয় তাকে আমি দেখিনা। ভিডিও কলে কথা না হলে আমি তার চেহারা ভুলেই যেতাম। বাবা বলেছিলো দেশে এসে আমাকে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবে। আপনারা আমার বাবাকে এনে দিন।
সাগর জোমাদ্দারের স্ত্রী শান্তা আক্তার বলেন, সাত বছর প্রেমের পর সাগরের সাথে আমার বিয়ে হয়। কিন্তু দুইমাসের বেশি আমরা সংসার করতে পারিনি। সেদিনও ভিডিও কলে কথা হলে সে বলেছিলো ঈদে সবার জন্য কেনাকাটা করতে টাকা পাঠাবে। কিন্তু তার আগেই আল্লাহ তাকে না ফেরার দেশে নিয়ে গেল। আমি এখন কার জন্য বাচঁবো!