শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
টঙ্গী ইজতেমায় প্রথম দিনে ৩ মুসল্লীর মৃত্যু কোনাবাড়ীতে হকার্স মার্কেটে অগ্নি কাণ্ডে ৯ দোকান পুড়ে ছাই বিশ্ব ইজতেমায় বয়ান শুনে ধ্যানে মগ্ন মুসল্লিরা সলঙ্গায় অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায় টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় এক মুসল্লীর মৃত্যু কোনাবাড়ীতে হোটেল হ্যাভেন ফ্রেসে চলছে রমরমা দেহ ব্যবসা গাজীপুরে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ নারী মাদককারবারি গ্রেপ্তার গ্লোবাল র‍্যাঙ্কিংয়ে বশেমুরকৃবি’র প্রথম স্থান অর্জন উৎসব ও বিশ্বদ্যিালয় দিবস উদযাপন ১ ফেব্রুয়ারি স্বাধীনতার পর জাতির জন্য ভালো কিছু হয়নি তাতে একমত হবো না” ডাঃ শফিকুর রহমান

লালমনিরহাটে এক অমুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা ও ঋণের টাকা নিয়ে নানান গুঞ্জন!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: / ১৫২ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এর তদন্ত প্রতিবেদনে লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের কাজীর চওড়া গ্রামের মৃত তারিণী চন্দ্রের ছেলে প্রতাপ চন্দ্র রায় একজন অমুক্তিযোদ্ধা।

তদন্তে উঠে এসেছে, সেই অমুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ, অনিল ও হরেকৃষ্ণ তিন তিনটি নাম। তিন নাম ব্যবহাকারী অমুক্তিযোদ্ধাকে হঠাৎ করে সম্মানী ভাতা ও গৃহঋণের ৮ লক্ষ টাকা প্রদানের ঘটনায় জেলা জুড়ে নানান গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। দফায় দফায় তদন্ত কমিটির কাছে প্রতাপ চন্দ্র রায় অমুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ থাকলেও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহ্মুদা মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক, সোনালী ব্যাংক লিঃ, লালমনিরহাট শাখার সিনিয়র পিন্সিপাল অফিসার আব্দুল মতিন সরকারের সহযোগীতায় এক অমুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের (২ জুলাই) রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মানী ভাতা পেতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লালমনিরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে দুদকের গণশুনানিতে নিজেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দাবী করেন প্রতাপ চন্দ্র রায়। জেলা প্রশাসক আবু জাফরের সভাপতিত্বে গণশুনানি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, দুদক পরিচালক নাসিম আনোয়ার, মনিরুজ্জামান খান। অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানীতে লিখিত আবেদন করেন প্রতাপ চন্দ্র রায়। এরেই প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে রংপুরের দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শেখ মেসবাহ উদ্দিন স্বাক্ষরিত পত্রের স্মারক নং-০৪.০১.৮৫০০.৭২৫.৯৯. ০২৪.১৯.১১৬৫, ২০/০৮/২০১৯ইং তারিখে লালমনিরহাট সদর উপজেলায় অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রাপ্ত অভিযোগ সিদ্ধান্ত মোতাবেক গৃহীত ব্যবস্থাদির উপর প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার-কে নির্দেশ দেন।

উক্ত গণশুনানিতে প্রাপ্ত অভিযোগের ২নং তালিকায় প্রতাপ চন্দ্র রায়ের নাম রয়েছে। তার অভিযোগ, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা অন্য আরেক জনের উত্তোলন করছেন। অভিযোগটি “সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সমাজসেবা অফিসার” একত্রে তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয় দুদক। যার -৪১.০১.৫২৫৫.০০০.১৬.২৭২.১৭.৬৬৬, ২৬/০৯/২০১৯ইং তারিখ স্মারকে শুনানিতে প্রাপ্ত অভিযোগ প্রতাপ চন্দ্র রায়ের প্রতিবেদন জমা দেন।

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সদর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বাস্তবায়ন কমিটিতে যাচাই-বাছাই করা হয়। প্রথম বার সভায় প্রতাপ চন্দ্র রায় তার প্রমাণ ছাড়াই উপস্থিত হয়ে শুধুমাত্র যুদ্ধকালীন তার অবস্থান, তিনি কোথায় যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এসব বিষয়ে বক্তব্য দেন। পরবর্তীতে নির্ধারিত তারিখে সকল প্রমাণসহ ২জন সহযোদ্ধা নিয়ে উপস্থিত হতে প্রতাপ চন্দ্র রায়কে বলেন তদন্ত কমিটি। সেই তারিখে ২ জনের মধ্যে ১ জন সহযোদ্ধাকে নিয়ে তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হয়ে নতুন করে তার যুদ্ধকালীন অবস্থান সম্পর্কে কমিটিকে অবগত করেন যা পূর্বের যুদ্ধকালীন বর্ণনার সাথে কোন মিল পাননি। ওই সময় প্রতাপ চন্দ্র রায়ের সহযোদ্ধা তদন্ত কমিটিকে জানান, তিনি প্রতাপ চন্দ্রকে ওকড়াবাড়ি শরনার্থী ক্যাম্পে দেখেছিলেন। সেখানে তিনি প্রতাপ চন্দ্রকে রেখে প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান। তিনি প্রতাপ চন্দ্রের সাথে প্রশিক্ষণ বা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেননি। এমতাবস্থায় প্রতাপ চন্দ্র রায় আরও ২ জন সহযোদ্ধার সাক্ষ্য নেয়ার আবেদন করলে তদন্ত কমিটি তাকে পুনরায় সুযোগ দেন। নির্ধারিত তারিখে প্রতাপ চন্দ্রের ২ জন সহযোদ্ধার উপস্থিত হয়ে একজন সহযোদ্ধা তাকে ওকড়াবাড়িতে ও আর একজন সহযোদ্ধা তাকে বাউড়াতে দেখেছেন। কিন্তু তাদের কারও সাথেই প্রতাপ চন্দ্র রায় প্রশিক্ষণ কিংবা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেননি। সকল সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহন শেষে তদন্ত কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, প্রতাপ চন্দ্র সঠিক ব্যক্তি নয়।

পরবর্তীতে ২০২১ইং সালে লালমনিরহাটের বীর মুক্তিযোদ্ধের সম্মাণী ভাতা বিতরণের দায়িত্ব উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিবর্তে সোনালী ব্যাংক, লালমনিরহাট শাখায় হস্তান্তর করা হয়। যা পদাধিকার বলে, লালমনিরহাট সদর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সাধারণ সম্পাদক, সোনালী ব্যাংক, লালমনিরহাট শাখা ব্যবস্থাপক।

উক্ত প্রতাপ চন্দ্র রায়ের ব্যাপারে দফায় দফায় তদন্তে কমিটির কাছে অমুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ থাকলেও ২০২২ইং চলতি বছরে হঠাৎ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক, সোনালী ব্যাংক লিঃ, লালমনিরহাট শাখার সিনিয়র পিন্সিপাল অফিসার আব্দুল মতিন সরকারের সহযোগিতায় তার সম্মানী ভাতা বাস্তবায়ন করা হয়। ফলে সোনালী ব্যাংক লিঃ, লালমনিরহাট শাখার মাধ্যমে প্রতাপ চন্দ্র রায়কে চলতি বছরের একযোগে ৬ মাসের মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা হিসেবে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন। তারপর আবারও ১ মাসের সম্মানী ভাতা হিসেবে ২০ হাজার টাকা পান। এরপর গৃহঋণের ৮ লক্ষ টাকা ঋণ দেন সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ।
একজন অমুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায়কে শুধু ভাতা প্রদান করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহ্মুদা মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক, সোনালী ব্যাংক লিঃ, লালমনিরহাট শাখার সিনিয়র পিন্সিপাল অফিসার আব্দুল মতিন সরকার ক্ষান্ত হয়নি। চলতি বছরের আগষ্ট মাসে সোনালী ব্যাংক লিঃ, লালমনিরহাট শাখার মাধ্যমে ৮ লক্ষ টাকা গৃহঋণ দেয়া হয়েছে। ফলে জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে নানান গুঞ্জন সৃষ্টি হয়।

এমনকি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের চাপের মুখে অবশেষে প্রতাপ চন্দ্র রায়ের সম্মানী ভাতা সাময়িক ভাবে স্থগিত করেন। এবং গৃহ ঋণের ৮ লক্ষ টাকা দফায় দফায় আদায় শুরু করেছেন সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
উক্ত অমুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা ও ঋণ প্রদানের বিষয়ে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের হলরুমে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বাস্তবায়ন কমিটির এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিষয়ে প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, চলতি বছরে আমার নামে সম্মানী ভাতা চালু হয়েছে। আমি ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ মাসের সম্মানী ভাতা হিসেবে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পেয়েছি। তারপর আরও ১ মাসের সম্মানী ভাতা হিসেবে ২০ হাজার টাকা পেয়েছি। এর মাঝে গৃহঋণ বাবদ পেয়েছি ৮ লক্ষ টাকা পেয়েছি। কিন্তু আগষ্ট মাসে হঠাৎ করে আমার সম্মানী ভাতা সাময়িক ভাবে স্থগিত করে গৃহঋণের ৮ লক্ষ টাকা ফিরত দেয়ার চাপ দেন সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সোনালী ব্যাংক লিঃ, লালমনিরহাট শাখার সিনিয়র পিন্সিপাল অফিসার আব্দুল মতিন সরকার বলেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা বাস্তবায়ন কমিটির সিন্ধান্ত ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের লাল মুক্তিবার্তা প্রকাশিত গেজেট অনলাইনে সবেই ঠিক পেয়েছি। তাই তিনি সম্মানী ভাতা পেয়েছেন।
প্রতাপ চন্দ্র রায় একজন অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার দপ্তরে অনেক তদন্ত প্রতিবেদন রয়েছে তারপরেও তিনি ভাতা ও গৃহঋণ পেল কিভাবে এমন প্রশ্নে জবাবে আব্দুল মতিন সরকার বলেন, আমরা নতুন ভাবে দায়িত্ব পেয়েছি। তাই তার ব্যাপারে বেশি কিছু জানা ছিল না। সম্মানী ভাতা ও ঋণ প্রদানের পরে প্রতাপ চন্দ্রের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা মাসুম বলেন, প্রতাপ চন্দ্র রায় যে একজন অমুক্তিযোদ্ধা তা কেউ আমাকে বলেনি। তার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ে সঠিক ছিল বলে সম্মানী ভাতা পেয়েছে। ভাতা পাওয়ার পরে অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নানান কথা শুনা যাচ্ছে।
প্রতাপ চন্দ্র রায়ের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এর তদন্ত কমিটিতে একজন সদস্য হিসেবে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপস্থিত ছিলেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতাপ চন্দ্র রায় অমুক্তিযোদ্ধা। এছাড়াও হারাটি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাক্ষরিত একটি রেজুলেশনেও প্রতাপ চন্দ্র রায় অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ব্যখ্যা দিয়ে পত্র সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে জমা আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ভাতা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মাহমুদা মাসুম বলেন, ওইসব তদন্ত প্রতিবেদন আমি দেখি নাই। আমার আগের অফিসার হয়তোবা জানেন। প্রতাপ চন্দ্র রায় মুক্তিযোদ্ধা না অমুক্তিযোদ্ধা তা পুর্নবায় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর