আগামী সপ্তাহে ফের চালু হচ্ছে মৈত্রী এক্সপ্রেস
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটির পরিষেবা আবার শুরু হচ্ছে। দুই দেশের আলোচনার মধ্যেই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি বৈঠক থেকে এ বিষয়ে সায় মিলেছে। মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী বুধবার (২০ এপ্রিল) বা তার এক-দুদিন আগে-পরে এই পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ না জানালেও দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহম্মদ ইমরান বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) বলেন, ‘শিগগিরই আবার এই ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আবার মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হয়ে যাবে।’
মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু করার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা ও খুলনার মধ্যে যাতায়াতকারী বন্ধন এক্সপ্রেসও আবার চালু করা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারত সরকার এটিতেও সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছে, ফলে দুটি ট্রেনই কাছাকাছি সময়ে আবার যাত্রা শুরু করবে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যাত্রীরা নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন, তাদের জন্য এটা একটা বিরাট সুখবর। কারণ এই রুটে ফ্লাইটের ভাড়া তাদের অনেকেরই সাধ্যের বাইরে। আর ট্রেন সার্ভিস চালু হলে তুলনামূলক অনেক কম ভাড়ায় তারা আবার দুদেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারবেন। তাছাড়া ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য পর্যটন ভিসা দিতে শুরু করায় এই রুটে যাত্রীদের বিপুল চাপ থাকবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার (১১ এপ্রিল) দিল্লির নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস চালু করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও সেখানে ভারতীয় রেল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ব্যুরো অব ইমিগ্রেশন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা যোগ দেন।
আন্তর্জাতিক রুটের এই দুটো ট্রেন ফের চালু করার জন্য ভারতের দিকে প্রস্তুতি কতটা, বৈঠকে তা খতিয়ে দেখা হয়। নিরাপত্তাগত ও সুরক্ষার দৃষ্টিকোণে প্রস্তুতি, কোভিডের পটভূমিতে স্বাস্থ্যগত অবকাঠামো কতটা তৈরি এবং ভারতীয় রেল ট্রেন চালানোর জন্য কতটা প্রস্তুত– এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরই ট্রেন চালানোর ব্যাপারে ভারতের দিক থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেসের রুটে ভারতের দিকে যে তিনটি ট্রানজিট পয়েন্ট পড়ে, সেই চিতপুর (কলকাতা), গেদে ও হরিদাসপুর রেল স্টেশনকেও প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া ঢাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত যে ট্রেন চালানোর বিষয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রস্তুতি চলছে, সেটাও আগামী মাসের মধ্যেই (মে) ‘গ্রিন সিগনাল’ পেয়ে যাবে বলে আভাস মিলেছে। এই ট্রেন চালু হলে বাংলাদেশ থেকে পর্যটকরা সরাসরি শৈলশহর দার্জিলিং, কার্শিয়াং-কালিম্পং কিংবা সিকিমের দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে পারবেন। হিমালয় চলে আসবে তাদের হাতের নাগালে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বাংলা নববর্ষেই এই ট্রেনটি চালু করতে চেয়েছিল, তবে ভারতের দিকে এখনও কিছু জটিলতা রয়ে গেছে বলে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরও কিছুটা সময় লাগছে।