বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ অপরাহ্ন

ইন্ধনদাতাদের খোঁজে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা

রিপোর্টারের নাম : / ১৬০ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০২২

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনামতো চা শ্রমিকদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও কেন চা শিল্পের সংকট কাটছে না পর্যালোচনা শুরু করেছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। বিষয়টির রহস্য উদঘাটনে প্রশাসন এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এর নেপথ্য কারণ ও ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে।

জানা গেছে, একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে আসার পর কেন শ্রমিকরা আবার মাঠে নেমেছেন, পেছন থেকে কারা কলকাঠি নাড়ছেন, নেপথ্যে রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী কোনো মহল জড়িত কি না তা খুঁজে দেখবেন গোয়েন্দারা। এর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কোনো যোগসূত্র আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে। যেখানে চা শিল্পের বিকাশ ঘটছে এবং এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা শান্তভাবে কাজ করছিলেন সেখানে কেন হঠাৎ এমন অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলো তারও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে কেন আবার চা শ্রমিকরা মাঠে নামলেন সেটি ভাবা হচ্ছে।

এদিকে, প্রশাসন ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের রোববার রাতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আবার ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাধারণ চা শ্রমিকেরা। সোমবার সকাল থেকে শ্রমিক নেতাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজে ফিরেছিলেন উপজেলার ভাড়াউড়া, ভুরভুরিয়াসহ কয়েকটি চা বাগানের শ্রমিকরা। কিন্তু অন্যান্য বাগানের শ্রমিক কাজে যোগ না দেওয়ায় তারাও কাজ বন্ধ করে ধর্মঘটে অংশ নেন।

এদিন শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট চা বাগানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ ধর্মঘট প্রত্যাহার করার কথা বলতে গিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত হন। দুপুর ১২টার দিকে কালীঘাট চা বাগান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ফুলছড়া চা বাগান হয়ে ভাড়াউড়া চা বাগানে এসে শেষ হয়। এ সময় শ্রমিকরা নানা ধরনের সেস্নাগান দেন।

এর আগে গত রোববার শ্রমিকরা স্থানীয় মহাসড়ক অবরোধ করে সেস্নাগান তুলেছিলেন ‘আমরা সবাই শ্রমিক সেনা, ভয় করি না বুলেট-বোমা’, ৩০০ টাকা মজুরি দে, নইলে বুকে গুলি দে’, ‘বাধা আসবে যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’, ‘১৪৫ টাকা মজুরি মানি না মানব না’ ইত্যাদি।

গত রোববার রাত ৯টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে আগের ১২০ টাকা মজুরিতে কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। দুই পক্ষ যৌথ বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। সেখানে মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়, আজ অনুষ্ঠেয় ১৪৫ টাকা মজুরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দীসহ বিভিন্ন ভ্যালির সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের প্যাডে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে সভার সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তার সম্মানে চা শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আজ কাজে যোগ দেবেন। আপাতত চলমান মজুরি ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকরা কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে পরবর্তী সময়ে মজুরির বিষয়টি নির্ধারিত হবে। আসন্ন দুর্গাপূজার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার জন্য চা শ্রমিক নেতারা আবেদন করেছেন, যা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানানো হবে। চা শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া হবে। সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। আর বাগান মালিকরা চা বাগানের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ধর্মঘটকালীন মজুরি শ্রমিকদের পরিশোধ করবেন।

তারপরও কেন শ্রমিকদের একাংশ আন্দোলন করছেন এবং নেতাদের কেউ কেউ তাতে সায় দিচ্ছেন সে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে শ্রমিক নেতা পঙ্কজ কন্দ লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে চা শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করার ছক কষছে কি না বিশেষ কোনো মহলে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

জানতে চাইলে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, চা শ্রমিকদের সংকট নিরসনে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক হওয়ার পরে কেন নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। চা শ্রমিক ইউনিয়নের যে নেতারা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কাজে ফেরার অঙ্গীকার করেছেন তারা কেন বৈঠকের পরদিন ইউটার্ন নিলেন সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ।

তিনি বলেন, একটি বিষয় ফয়সালা হওয়ার পর কেন চা শ্রমিকরা আবার আন্দোলনে নামলেন, কারা এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছেন, নেপথ্যে কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। এরই মধ্যে এ আন্দোলনের রহস্য উদঘাটনে মাঠে কাজ শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ইশরাত জাহান বলেন, এরই মধ্যে আন্দোলনে থাকা অনেক শ্রমিক কাজে ফিরেছেন। আশা করা যাচ্ছে, সব শ্রমিকই শেষ পর্যন্ত কাজে ফিরবেন। তার মতে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চা শিল্পে চলমান সংকটের সমাধান হবে।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী বলেন, চা শিল্পে চলমান সংকটের সঙ্গে যুক্ত একটি গ্রম্নপ শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করছে। এর সঙ্গে একাধিক সুবিধাবাদী চক্র জড়িত। তাদের কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, কেউ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। এরা মজুরির বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। বিষয়টি কঠোর দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, শ্রমিক নেতারা এরই মধ্যে তাদের প্রতিশ্রম্নতি ভঙ্গ করেছেন। মহাসড়ক অবরোধ বা জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মতো কর্মসূচি দেবেন না বললেও তারা তা করেছেন। এটা সঙ্গত হয়নি। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে টানা ধর্মঘট পালন করছেন চা শ্রমিকরা। সরকারি আমলা, সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েক দফায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হলেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর