তিন দিনে ৭ জন ছুরিকাহত যশোরে কথায় কথায় ছুরি চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা

মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি:-যশোর শহরে ছুরির ব্যবহার বেড়েছে। দুর্বৃত্তরা কথায় কথায় অবাধে ধারালো অস্ত্রটির ব্যবহার করছে। গত ৩ দিনে ছুরিকাঘাতে ৭ জন জখম হয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার খাতা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অধিকাংশ ঘটনার সাথে উঠতি বয়সী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িত। পুলিশ বলছে, বিচ্ছিন্নভাবে এসব ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বাগডাঙ্গার বাবুবাজারে অনলাইনে জুয়া খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সাইফুল ইসলাম হিরো (২৮) নামে এক ছুরিকাহত হয়েছেন। তিনি বাগডাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। স্থানীয় মহিদুলের দোকানে বসে অনলাইনে জুয়া খেলার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে একই গ্রামের ইব্রাহিম বিশ্বাস ও তার ছেলে সাকিব মিলে তাকে ছুরিকাঘাতে জখম করে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সার্জারী বিভাগের চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই হিরোকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বুধবার ভোরে যশোর শহরের চিত্রা মোড়ে ট্রাক চালক ইউনুস হোসেন (৪৩) ছুরিকাহত হন। তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার হেলা গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে। আহত ইউসুফ হোসেন জানান, বুধবার ভোর ৫ টার দিকে চিত্রা মোড়ে প্রস্রাব করার জন্য ট্রাক থেকে নিচে নামলে ২/৩ জন দুর্বৃত্ত তার ওপর হামলা চালায়। দুর্বৃত্তরা এসময় তার পেটে ও হাঁটুর নিচে ছুরিকাঘাত করে কাছে থাকা আনুমানিক ১৮/১৯ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মঙ্গলবার রাতে যশোর পৌর হকার্স মার্কেটে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে জখম হন এমএম কলেজ আসাদ গেট এলাকার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে সুজন (৩০)। সুজন জানান, রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তিনি পৌর হকার্স মার্কেটে একটি চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে জিম্মি করে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। বাধা দেওয়ায় দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। আশেপাশের লোকজন তাকে হাসপাতালে আনেন।
মঙ্গলবার আরও দুই জন ছুরিকাহত হন। তারা হলেন বারান্দীপাড়া কদমতলার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৪৫) ও ঘোপ বেলতলা বউবাজার এলাকার আরশাদ আলীর ছেলে কবির হোসেন (২২)।
আহত হেলাল উদ্দিন জানান, দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বারান্দী মোল্যাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে স্থানীয় দুর্বৃত্ত সম্রাট, আরমান ও রবিউল তার ওপর হামলা চালায়। এসময় তিনি প্রাণ বাঁচাতে পাশে হাসানের টেইলার্সের দোকানের মধ্যে পালায়। দুর্বৃত্তরা টেনে হেচড়ে তাকে দোকানের বাইরে নিয়ে ছুরিকাঘাতে জখম করে চলে যায়। আহত হেলালের দাবি, চাঁদার টাকা না পেয়ে দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করে।
আরেক ছুরিকাহত কবির হোসেন জানান, তিনি পেশায় অ্যাম্বুলেন্সের চালক। বিকেল ৫ টার দিকে তিনি রিকশা চড়ে যাচ্ছিলেন। এসময় আশ্রম রোডের চার খাম্বার মোড় এলাকার জনি কাবাবের সামনে পৌঁছালে শংকরপুর এলাকার গোল্ডেন সাব্বির ও শিপন রিকশার গতিরোধ করে তার মাথায় ছুরিকাঘাত করে। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তার ওপর হামলা করা হয়েছে বলে কবির হোসেনের দাবি। পরে আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতালে আনেন।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত জানান, বিচ্ছিন্নভাবে এসব ঘটনা ঘটেছে। ছুরির অবাধ ব্যবহার ঠেকাতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে। কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের প্রায়ই আটক করা হচ্ছে। এদের দমনে খুব শিগগির স্পেশাল অভিযান শুরু হরা হবে।