শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
উৎপাদন ব্যয় কমাবে যান্ত্রিক কৃষি, সমলয় ধান চাষ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক  ডেবিল হান্ট অভিযানে গাজীপুর নগরীতে গ্রেফতার-১৪ গাজীপুরে মহাসড়কে ছিনতাইয়ের চেষ্টা, সেনাবাহিনীর হাতে আটক ৩ গাকৃবি’র শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার হলে বিদায় সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত কোনাবাড়ীতে আবাসিক হোটেল থেকে ২ নারীসহ ১৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ ভুরুঙ্গামারীতে চর বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের দাবীতে মানববন্ধন ‎উপজেলা প্রকৌশলীদের উপর হামলা ও হুমকির প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন কাজিপুরের লাইসিয়াম স্কুল এন্ড কলেজ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ২০২৫ অনুষ্ঠিত  লালমনিরহাট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শ্যামল ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আটক!

আদানির বিদ্যুৎ রফতানির বাণিজ্যিক ঘোষণা

রিপোর্টারের নাম : / ২৪৯ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩

দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। এর মধ্যে ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ গ্রামে এবং ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশের বাস শহরে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর সমন্বয়কৃত জনসংখ্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মোট জনসংখ্যার ৪২ দশমিক ৮৪ শতাংশ ১৫-৩৯ বছর বয়সী। এছাড়া শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সী ২৮ দশমিক ৮১ এবং চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের হার ২৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তরুণ ও কর্মক্ষমের সংখ্যা বেশি হলেও এখনো বাংলাদেশ এ জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না। এ বিষয়ে পরিকল্পনার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শক্তিশালী করতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ানোরও তাগিদ দেন তারা।

দেশজুড়ে গত বছরের ১৫ থেকে ২১ জুন ষষ্ঠ জনশুমারি হয়। এক মাসের ব্যবধানে এর প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। তখন বলা হয়, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ  বিবিএসের শুমারিতে কতসংখ্যক মানুষ বাদ পড়েছে, তা জানতে আলাদাভাবে জরিপ করে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের ১০-১৬ অক্টোবর দেশের মোট ৩৭৮টি গণনা এলাকায় ট্যাবলেট ব্যবহার করে ক্যাপি পদ্ধতিতে এ জরিপ পরিচালনা করে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করা প্রতিবেদনে বিআইডিএস জানায়, বিবিএসের শুমারিতে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ৪৭ লাখ মানুষ বাদ পড়েছে। তাদের যোগ করলে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ কোটি ৯৮ লাখে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ২৯৫ জনকে যোগ করে বিবিএস জানায়, দেশের সমন্বয়কৃত মোট জনসংখ্যা হলো ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ এর মধ্যে পুরুষ ৪৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বা ৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ এবং নারী ৫০ দশমিক ৪৩ শতাংশ বা ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন। যদিও প্রাথমিক প্রতিবেদনে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪, নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ এবং হিজড়ার সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৬২৯।

বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাঁচ বছর করে বিভিন্ন বয়সী মানুষের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে।এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১০ শতাংশ বা ১ কোটি ৭১ লাখ ৬০ হাজার ১৭৫ জনের বয়স ১০-১৪ বছর। এছাড়া ১৫-১৯ বছর বয়সী ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, ২৫-২৯ বছর বয়সী ৮ দশমিক ৬৯, ৩০-৩৪ বছর বয়সী ৭ দশমিক ২৭ এবং ৩৫-৩৯ বছর বয়সী লোকের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ সাড়ে আট কোটির বেশি মানুষের বয়স ১০ থেকে ৩৯ বছর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক লভ্যাংশ স্তরে রয়েছে অর্থাৎ কোনো দেশের ক্ষেত্রে কর্মক্ষম মানুষ কর্মক্ষমহীন মানুষের চেয়ে বেশি হলে তখন তাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড স্তর বলে ধরে নেয়া হয়। এর বাইরেও অনেক বড় একটি অংশ তরুণ। ফলে এ স্তরে থাকাকালে একটি দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখার সুযোগ হয়। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড স্টেজে আছি বিশেষ করে কর্মক্ষম মানুষ মোট জনসংখ্যার যদি বড় অংশ থাকে তাহলে যেকোনো দেশ কিছু সুবিধা পায়। কারণ তরুণ ও কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেশি থাকে। তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। এ সুযোগ সাধারণত আগামী ১৫ বছর স্থায়ী হবে। এ সময়ে যদি আমরা তরুণদের যথাযথ ব্যবহার করতে না পারি তাহলে কিন্তু আমরা সুযোগটা হারাব। এজন্য যারা তরুণ জনগোষ্ঠী তাদের শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তাদের স্বাস্থ্যগতভাবে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা এটা করতে ব্যর্থ হলে সময় পেরিয়ে যাবে। এখনই সবচেয়ে উপযোগী সময় এদিকে গুরুত্ব দেয়ার। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের চেয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। যতটুকু এ দুই খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজন ছিল তা কিন্তু আমরা করিনি। এখনই উদ্যোগ না নেয়া গেলে যতটুকু সম্ভাবনা রয়েছে তাও আমরা হারাব। তরুণ জনগোষ্ঠী যারা আছে তারা অনেকে পড়াশোনা করছে। যথাযথ শিক্ষা পেলে ভবিষ্যতে তারা উন্নয়নে অবদান রাখবে। সময় পেরিয়ে গেলে বিনিয়োগ করলেও কোনো লাভ হবে না। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ বিষয়টি থাকলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ৪০-৪৪ বছরের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ৪৫-৪৯ বছরের ৪ দশমিক ৯৪, ৫০-৫৪ বছরের ৪ দশমিক ৬৬, ৫৫-৫৯ বছরের ৩ দশমিক ৪৪, ৬০-৬৪ বছরের ৩ দশমিক ৩৭, ৬৫-৬৯ বছরের ২ দশমিক ৩৭, ৭০-৭৪ বছরের ১ দশমিক ৭২ এবং ৭৫ বছরের বেশি এমন মানুষের সংখ্যা ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ আর ০-৪ বছর বয়সী রয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং ৫-৯ বছর বয়সী ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। এছাড়া ব্যালান্স জনসংখ্যা ধরা হয়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

সমন্বয়কৃত জরিপে বিভাগভিত্তিক জনসংখ্যা পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস ঢাকা বিভাগে—৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৫, যা মোট জনগোষ্ঠীর ২৬ দশমিক ৮৮ ভাগ। সবচেয়ে কম মানুষ বাস করে বরিশাল বিভাগে—৯৩ লাখ ২৫ হাজার ৮১৮ জন বা ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে বসবাস করে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮১ জন বা মোট জনসংখ্যার ২০ দশমিক ১৩ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২ কোটি ৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৩ জন বা ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ, রংপুরে ১ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার ৭৩ জন বা ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ, খুলনায় ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৭ জন বা ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ১ কোটি ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫২৪ জন বা ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং সিলেটে ১ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার ২১ জন বা মোট জনগোষ্ঠীর ৬ দশমিক ৭২ ভাগ।

দেশের কর্মক্ষম মানুষের গুরুত্ব তুলে ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, ‘দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৫-২৯ বয়সী মানুষ ৩২ দশমিক ৮৪ শতাংশ এরাই আমাদের আগামী দিনের শক্তি। এদের কাজে লাগাতে হবে। আমাদের দায়িত্ব তথ্য প্রকাশ করা। সরকারের অন্য সংস্থাগুলো এদের নিয়ে কাজ করলে ও গবেষণা করলে আগামী দিনে ইতিবাচক ফল পাবে। এদের এখনই কাজে লাগাতে হবে। কারণ এরা প্রডাক্টিভ। এদের নিয়ে ভাবা উচিত।’

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রতি বছর জনসংখ্যার তথ্য হালনাগাদের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আমাদের যন্ত্র আছে, জ্ঞান ছে, জনবল আছে। সরকারি কর্মকর্তা আছে। তাহলে কেন জনসংখ্যার তথ্য জানার জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে? জনশুমারির পেছনে কেন দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে? এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসে এক বছরের মধ্যে জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশ করা হয়। ইউরোপের দেশগুলোতেও তা-ই হচ্ছে। আমাদের দেশেও এক বছরের মধ্যে জনশুমারির তথ্য প্রকাশ করা যায় কিনা, তা দেখতে হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর