বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

একই পদে দুই শিক্ষক নিয়োগ দুদকের জালে ফেঁসে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক!

কলমের বার্তা / ৬৭ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বুধবার, ৭ মে, ২০২৫

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: একই পদে দুইজন শিক্ষক নিয়োগ, সরকারী অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগে দুদকের জালে ফেঁসে যাচ্ছেন লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার বালাপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক। গত ২১এপ্রিল লালমনিরহাটে দুদকের গণ শুনানিতে বিষয়টি উত্থাপিত হলে অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারমন্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২১ আগষ্ট ওই বালাপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় শূন্য পদে একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে ওই পদে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে প্রধান শিক্ষক এনামুল হক তার আত্মীয় এনতাজুল হক নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন। ২০১৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী বিদ্যালয়ের নিয়োগ শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে আতাত করে তাকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পত্র দেন। এরপর সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন করে ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একজন সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে পত্রিকায় আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

পরে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে মতিউর রহমান (৪৪) নামে এক প্রার্থীর কাজ থেকে ওই প্রধান শিক্ষক ৭ লাখ ৬০ হাজার উৎকোচ নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত  করে। পরে  ম্যানেজিং কমিটির সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে প্রধান শিক্ষক তাকেও নিয়োগ পত্র প্রদান করেন। নিয়োগ পত্র প্রদান করে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তাকে বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করে নেন।  কিন্তু কৌশলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক ওই সহকারী প্রধান শিক্ষককে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা থেকে বিরত রাখেন। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন একই পদে কোন প্রকার নিয়োগ পরীক্ষা না নিয়ে ভূপতি রঞ্জন রায় নামে অপর এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে গোপনে নিয়োগ দিয়েছে প্রধান শিক্ষক এনামুল হক। এছাড়াও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক সহকারী শিক্ষক পদে কাজল রেখা নামে একজনের কাছ থেকে ৮ লাখ, আব্দুল মোতালেব নামে একজনের কাছ থেকে ৪ লাখ, তপন কুমার রায় মন্ডল নামে একজনের কাছ থেকে ৯ লাখ, সুলতানা বেগম নামে একজনের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া একই পদে একাধিক চাকরি প্রত্যাশিদের কাছ থেকে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এনিয়ে একাধিক বার হয়েছে বিচার সালিশ, থানা ও কোর্টে হয়েছে মামলা।

তবে লালমনিরহাটে ওই দুদকের গণ শুনানিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের নিয়োগ বাণিজ্য সহ নানা অপকর্মের প্রমাণসহ অভিযোগ উত্থাপিত হলে নড়েচড়ে বসেন দুদক। ওই গণ শুনানিতে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসককে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং দুদক অফিসে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন। বর্তমানে অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা দূর্নীতি ও অনিয়ম দুদকের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন তদন্ত করছেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক উৎকোচ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং ওই বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে দুইজনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়নি বলেই ফোন কেটে দেন।
আদিতমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেন জানান, পূর্বের নিয়োগ বাতিল না করে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে দুইজনকে নিয়োগের অভিযোগটি দুদক ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে তদন্ত করছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার মজিবুর রহমান জানান, অভিযোগকারী সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ওই বিদ্যালয়ে পদত্যাগ না করেই ওই বালাপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেছিলেন। তবে প্রধান শিক্ষক তাকে নিয়োগ পত্র দিয়েছেন কি না তা দুদক ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে তদন্ত করছেন।

লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, জেলার আদিতমারী উপজেলার বালাপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে দুইজনকে নিয়োগ প্রদানের ব্যাপারে ভুক্তভোগীর দেওয়া লিখিত অভিযোগটি দুদক ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর