কোম্পানিগুলোর বোতলজাত সরবরাহ না করার অভিযোগ, বেনাপোল তেল নিয়ে তেলেসমাতি!

মনির হোসেন, বেনাপোল : বেনাপোল বাজারে সয়াবিন তেল নিয়ে তেলেসমাতি কারবার চলছে। দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো বাজারে চাহিদা মোতাবেক তেল সরবরাহ করছে না বলে অভিযোগ খুচরো ব্যবসায়ীদের। একইসাথে তেলের সাথে দেয়া হচ্ছে কোম্পানিগুলোর অচল মসলাপাতি ও নুডুলসসহ অন্যান্য মালামাল। তুলে দেয়া হয়েছে দোকানিদের তেল বিক্রির কমিশন। খুচরো দামেই দোকানিদের তেল কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তারা বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বেনাপোলে বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি দোকানেই বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে। তবে খোলা সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। দেশের প্রতিষ্ঠিত বসুন্ধরা, তীর ও ফ্রেশ কোম্পানির মত বড় বড় কোম্পানিগুলো রহস্যজনক কারণে বেনাপোল ব্যবসায়ীদের চাহিদা মত ভোজ্যতেলের যোগান দিতে পারছেন না। তবে কী কারণে তারা তেল সরবরাহ করতে পারছেন না, সে বিষয়েও পরিস্কার কিছু বলছেন না কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা। এ নিয়ে ক্রেতাদের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ ভোজ্যতেল কিনতে গিয়ে রীতিমত নাস্তানাবুদ হচ্ছেন। তারা স্বস্তিতে কোন দোকানে গিয়ে তেল কিনতে পারছেন না। তাদেরকে ঘুরে ঘুরে অথবা বিশেষ খাতিরের কোন দোকানে গিয়ে তেল কিনতে হচ্ছে। অবশ্য সে ক্ষেত্রেও তাদেরকে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। দোকানিরা বলছেন কোন উপায় নেই। তাদের বেশি দাম দিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামেই তাদেরকে বিক্রি করতে হচ্ছে। কোম্পানিগুলো এ তেল বিক্রিতে তাদের কমিশন উঠিয়ে দিয়েছে। বোতলের গায়ে লেখা দামেই তাদেরকে কোম্পানি থেকে সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তারা নির্ধারিত দামের উপর ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, কোম্পানিগুলো তাদের উপর আরো বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। তাদেরকে শুধু সয়াবিন তেল নিলে হচ্ছে না। সাথে সাথে ওই কোম্পানির পড়ে থাকা বিভিন্ন পদের মসলার গুড়ো বা নুডুলস নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। তা না হলে তারা তেল পাবেন না বলে অর্ডার স্লিপে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ক্রেতারা বেশি দাম দিয়েই বেনাপোলে বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনছেন।
বর্তমানে বাজারে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। অথচ বোতলের গায়ে লেখা রয়েছে খুচরো মূল্য ১৭৫ টাকা। অনুরুপভাবে দুই লিটারের তেলের মূল্য ৩৫২ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৬৫ থেকে ৩৭০টাকা। পাঁচ লিটারের তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৭০ থেকে ৮৮০ টাকায়। অথচ খুচরো বিক্রি মূল্য ৮৫২ টাকা। শার্শা উপজেলা বড় বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তারা কোম্পানি থেকে যে দামে তেল কিনছেন তার থেকে ৫-১০ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন। তা না হলে তাদের ব্যবসা চলবে কিভাবে। অবশ্য কেউ কেউ আবার সঠিক দামেই তেল বিক্রি করছেন।
বেনাপোল পৌরসভা ২ওয়ার্ডের দুর্গাপুর রোডে বাজার করতে আসা আব্দুল ওয়ারেশ বলেন, বাজারে ব্যবসায়ীরা তেল নিয়ে তেলেসমাতি কারবার শুরু করেছেন। দোকানি কেউ বলছেন বোতলজাত সয়াবিন তেল আছে, আবার বলছেন নেই। অবশ্য দাম বেশি দিলে সব দোকানেই তেল মিলছে। কোম্পানির কম সরবরাহের অজুহাতে তারা ক্রেতা ঠকিয়ে বেশি দাম আদায় করছেন।
বেনাপোল বাজার এলাকার বিল্লাল স্টোরের মালিক বিল্লাল হোসেন তিনি বলেন, একমাস আগে বসুন্ধরা কোম্পানিতে অর্ডার দেয়া তেলের মধ্যে এক লিটার ওজনের ১২ পিস তেল তিনি গত বুধবার১৯মার্চ সকালে পেয়েছেন। এরসাথে বিভিন্ন প্রকার গুড়ো মসলা তাকে গছিয়ে দেয়া হয়েছে। তেলের সাথে মসলার প্যাকেজ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
উপজেলা নাভারন বাজার গোপাল স্টোরের মালিক শংকর সাহা বলেন, গত প্রায় দু’মাস যাবৎ তারা তেল নিয়ে ক্রেতাদের তোপের মুখে রয়েছেন। একদিকে কোম্পানিগুলো ব্যবসায়ীদের চাহিদা মত তেল সরবরাহ করছে না। অপরদিকে, বেশি দাম নিয়ে তারা ক্রেতাদের বেশি কথা শুনছেন। যা অত্যন্ত অপমান ও লজ্জাজনক। তেল নিয়ে সরকারকে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে মোট সয়াবিন তেলের চাহিদা রয়েছে ২৪ লাখ টন। এ চাহিদার বিপরীতে গত বছরে আমদানী হয়েছে ৩০ লাখ টন ক্রড ওয়েল (অপরিশোধিত তেল)। যা চাহিদার চেয়েও অনেক বেশি। এছাড়া, রমজানকে টার্গেট করে শুধুমাত্র জানুয়ারি মাসে সয়াবিন তেল আমদানী হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার টন। এ হিসেবে চলতি রমজান মাসে সয়াবিন তেলের কোন সংকট হবার কথা নয়। কিন্তু পুরনো সেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তাদের ইচ্ছামত বাজার নিয়ন্ত্রণ ও তেল সরবারহ করছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
এ ব্যাপারে যশোর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তামান্না তাসমিন বলেন, রমজান মাসে যাতে কোন ব্যবসায়ী ক্রেতা জিম্মি করে অধিক মুনাফা আদায় করতে না পারে সে বিষয়ে তারা সজাগ রয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনছেন। এ অভিযান চলতি মাস জুড়ে অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।