সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

রেল-ট্রানজিটে খুলবে নেপাল ভুটানের পথ

রিপোর্টারের নাম : / ৩২ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪

বাংলাদেশ ও ভারতের রেল ট্রানজিট চুক্তির মধ্য দিয়ে ট্রান্স এশিয়ান নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে দেশের রেলওয়ে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করে ভারতের ট্রেন নিজেদের ভূখ-ে যাতায়াত করতে পারবে। আর বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে যেতে পারবে নেপাল ও ভুটানে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নে আগামী জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাত্রা হতে পারে। এর আগে দুই দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকে হবে প্রক্রিয়া নির্ধারণ। বাংলাদেশের রেলওয়ে ট্রেনের সময়সূচি নির্ধারণ করবে। সরকারের অন্যান্য সংস্থার মতামত নিয়ে ঠিক করা হবে ভারতীয় ট্রেন চলাচলের ট্যারিফ। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবীর বলেছেন, ভারতের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটান যাওয়ার সুবিধা পাবে। ভারতীয় ট্রেনের চলাচলে বাংলাদেশ রেলওয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহারের জন্য ভারত ট্যারিফ দেবে। এর হার কত হবে, তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হবে।

প্রস্তাবিত চুক্তিতে ১২টি রুটের কথা বলা হয়েছে, যেসব রুট ব্যবহার করে ভারতের মূল ভূখ- থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ‘সেভেন সিস্টার্স’খ্যাত সাতটি রাজ্যে যোগাযোগ সহজ হবে। নেপাল ও ভুটান যথাক্রমে ১৯৭৬ ও ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি করেছিল; কিন্তু ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে বাংলাদেশের মালবাহী গাড়ি চলাচল করতে না পারায় সেটি খুব একটা কার্যকর হয়নি। এখন ভারতের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার কারণে নতুন করে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আগে হওয়া চুক্তি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছে।

পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার

গেদে থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রাজ্যটির আলিপুরদুয়ার জেলা ডালগাঁও পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। গত মে মাসে দেশটির রেলওয়ে বোর্ডের প্রস্তাব অনুযায়ী পরীক্ষামূলক যাত্রায় পণ্যশূন্য ভারতীয় রেলগাড়ি গেদে থেকে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় আসবে। সেখান থেকে পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোরের আব্দুলপুর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, নীলফামারীর সীমান্তবর্তী চিলাহাটী স্টেশন হয়ে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ী স্টেশনে যাবে। সেখান থেকে ডালগাঁও স্টেশন পর্যন্ত যাবে। ডালগাঁওকে ভুটান সীমান্তবর্তী স্টেশন বলছে ভারত। যদিও সেখান থেকে ভুটানের ফুয়েন্টশিলং স্থল বন্দরের দূরত্ব শত কিলোমিটারের বেশি।

বর্তমানে পাঁচটি রুটে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলে। তিনটি যাত্রীবাহী ইন্টারচেঞ্জ, বাকি দুটি পণ্যবাহী। বাংলাদেশ-ভারত রুটে তিনটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী রাজশাহী-কলকাতা রুটে আরেকটি ট্রেন চালু হবে।

বর্তমান পদ্ধতিতে ভারতীয় ট্রেন সীমান্তে আসার পর বাংলাদেশি ইঞ্জিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসে। বাংলাদেশি লোকোমাস্টার (চালক) তা চালিয়ে আনেন। ফিরে যাওয়ার সময়ও একই রকম নিয়ম অনুসরণ করা হয়। রেল সূত্র জানিয়েছে, গত ২২ জুন সই হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রেন চালানোর সুবিধা পেলেও ট্রেন আগের প্রক্রিয়াতেই চলবে। কারণ দুই দেশের রেল পরিচালনা পদ্ধতি ভিন্ন।

দর্শনা থেকে চিলাহাটি রেলপথটি বাংলাদেশ রেলের অন্যতম ব্যস্ত সেকশন। এ পথে সক্ষমতার চেয়ে বেশি ট্রেন চলে। ভারতীয় ঋণে (এলওসি) নির্মাণাধীন বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন না হলে চাপ কমবে না। তবে এ প্রকল্প কবে সম্পন্ন হবে তা নিশ্চিত নয়। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে অনুমোদনের পর ৬ বছরে প্রকল্পটির অগ্রগতি মাত্র সাড়ে ১০ শতাংশ। আগামী ৩০ জুন শেষ হবে প্রকল্পের মেয়াদ। রেল সূত্র জানিয়েছে, গত ৮ মাসে ঋণের অর্থ ছাড় করেনি ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক।

হাসিমারা উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যকে যুক্ত করেছে দেশটির মূল ভূখ-ের সঙ্গে। ভূরাজনৈতিক কারণে এ রেলপথ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে দেশটির উত্তর-পূর্বগামী ট্রেন জলপাইগুড়ির ‘চিকেন নেক’ করিডর ঘুরে যায়। বাংলাদেশের দর্শনা, ঈশ্বরদী, আব্দুলপুর, পার্বতীপুর ও চিলাহাটী হয়ে গেলে ৩০০ কিলোমিটার পথ কমবে। আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল রাজ্যের সঙ্গে বাকি ভারতের রেল যোগাযোগ সহজ হবে। আসামের কোকড়াঝাড় জেলা থেকে ভুটানের গেলোপো পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করছে ভারত।

ঢাকার রেল ভবনের প্রস্তাব ছিল- বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত যে ট্রেন চালাতে চায়, এর শেষ গন্তব্য হবে গেলোপো। তা হলে রেলপথে যুক্ত হবে বাংলাদেশ-ভুটান। তবে ভারত হাসিমারা পর্যন্ত ট্রেন নিতে সম্মত হয়েছে। ফলে ভুটানের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের পথ এখনই খুলছে না বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর