লালমনিরহাটে বিক্রি করা দেড় বছরের সন্তানকে ফেরত পেতে থানায় অভিযোগ মায়ের

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেড় বছর বয়সী কণ্যা সন্তানকে বিক্রি করে লাপাত্তা হয়েছেন প্রতিবন্ধি আশরাফুল ইসলাম। বিক্রিত সন্তান ফেরত পেতে থানায় অভিযোগ মায়ের।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সাবেক স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বিক্রিত সন্তানের মা শাহনাজ বেগম। অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে। বাদি শাহনাজ তার সাবেক স্ত্রী এবং একই এলাকার মৃত রহিম উদ্দিনের মেয়ে।
অভিযোগ ও স্থানীয়রা জানান, গত ৩ বছর পুর্বে শাহনাজ বেগমের সাথে বিয়ে হয় আশরাফুল ইসলামের। বিয়ের পর থেকে যৌতুক নিয়ে বিবাদ লেগেছিল তাদের সংসারে। এরই মাঝে গর্ভবতি হন শাহনাজ। এতে আরও ক্ষিপ্ততা বাড়ে তাদের মাঝে। এক পর্যায়ে গর্ভজাত সন্তানকে নষ্ট করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে স্বামী আশরাফুল। কিন্তু কোন ভাবেই গর্ভস্থ সন্তানকে নষ্ট করতে দেননি মা শাহনাজ বেগম। অনেকটা আগলেই রেখেছেন। এ নিয়েও বিবাদ বেড়ে যায় তাদের সংসারে। বিচ্ছেদের সুর বেজে উঠে।
বাবার বাড়ি গিয়ে কণ্যা সন্তান প্রসব করেন শাহনাজ বেগম। মেয়ের নাম রাখেন আরফিনা। এরপর বাধ্য হয়ে সন্তানকে তার নানির কাছে রেখে স্বামীর সাথে ঢাকায় চলে যান শাহনাজ। ঢাকায় স্বামীর সাথে সংসার ভাল চলছিল না। পুনরায় যৌতুক নিয়ে বিবাদ হয় তাদের।
অবশেষে ঈদের ছুটিতে গ্রামে ফিরে গত ৪ এপ্রিল স্থানীয় ভাবে বৈঠক বসে শাহনাজ আশরাফুল দম্পত্তির সংসারের বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে প্রথম দিন সন্তান আরফিনা তার বাবার বাড়িতে থাকবে। এরপর থেকে তার মায়ের কাছে থাকবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক এক দিনের জন্য দেড় বছরের সন্তানকে নিয়ে গিয়ে তাদের প্রতিবেশী মহির উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল আলমের কাছে বিক্রি করে লাপাত্তা হন আশরাফুল ইসলাম।
নাড়ি ছেড়ে ধন বিক্রি হয়েছে শুনে স্থানীয় মাতব্বরদের দুয়ারে দুয়ারে নিস্ফল ঘুরেন আরফিনার জন্মদাতা মা শাহনাজ বেগম। অবশেষে বিক্রিত সন্তানকে ফিরত পেতে বুধবার সাবেক স্বামী আশরাফুল ইসলামকে প্রধান করে ৪ জনের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শাহনাজ বেগম।
শিশু আরফিনার জন্মদাতা বাবা আশরাফুল ইসলাম লাপাত্তা থাকলেও তার পালক বাবা আশরাফুল আলম বলেন, আমদের সংসারে কোন সন্তান নেই। তাই স্থানীয়দের মাধ্যমে আরফিনাকে তার বাবার কাছ থেকে দত্তক নিয়েছি। কোন টাকার বিনিময়ে নয় এবং লিখিতও হয়নি। তার বাবা ফেরত চাইলে ফেরত দিবো। তবে তার মা বা অন্য কাউকে দিতে পারি না।
শাহনাজ বেগম বলেন, এক দিনের জন্য আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেছে যৌতুক লোভী সাবেক স্বামী আশরাফুল। দুধ না পেয়ে মেয়েও কান্না করছে আমিও বাচ্চাকে খাওয়াতে না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। যে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও আমি আমার নাড়ি ছেড়ে ধনকে আমার কোলে ফিরে পেতে চাই। আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন বিক্রি করেছে। আমি এর বিচার চাই।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।