স্থল পথে রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা : বেনাপোল বন্দরে আটকে আছে ৩৬টি ট্রাক গার্মেন্টস পণ্য

মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাকসহ প্রায় সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার। এতে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক মাসের মাথায় ভারতের এই পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এল, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করার কথা বলেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি করে, গত অর্থবছরে তা প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করেছে ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে রপ্তানি হয়েছে ১১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকার পণ্য। যেসব দেশে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে, তার মধ্যে ভারত একটি, যেখানে প্রতিবছর প্রায় ৭০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশের মত পোশাক পণ্য স্থলপথেই রপ্তানি হয়। ফলে ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা এ খাতের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে বলে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা।
এদিকে শনিবার (১৭ মে) ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এক বিবৃতিতে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ হতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, গার্মেন্টস/তৈরি পোশাক পণ্যসহ সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ফলে ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় ৩৬টি গার্মেন্টস পণ্য বোঝাই বাংলাদেশী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে। ওই নিষেধাজ্ঞা আদেশে বাংলাদেশ হতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, গার্মেন্টস/তৈরি পোশাক পণ্যসমুহ শুধু মাত্র কলকাতা সমুদ্রপথে আমদানি করা যাবে উল্লেখ করেছেন।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়াড়িং এজেন্ট ষ্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। যে সকল পণ্যের এলসি/টিটি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে সে সকল পণ্য যাতে আমদানি করা যায় তার জন্য কাস্টমসে আলোচনা চলছে।
বেনাপোলের কয়েকজন রপ্তানিকারক জানান, স্থলপথে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে কার্যত ভারতের সঙ্গে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে থাকি কলকাতায়। সে টা বন্ধ হয়ে গেল। নৌপথে পণ্য পরিবহন করা আমাদে পক্ষে সম্ভব নয়। এতে খরচের পাশাপাশি সময়ের কারণে আমরা পারবো না।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ভারত সরকার স্থলবন্দর দিয়ে গার্মেন্টস সামগ্রী আমদানি নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে খরচ অনেক কম হতো কিন্তু সমুদ্র ও বিমান পথে পণ্য রপ্তানিতে খরচ অনেক বেশি হবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক লতা জানান, বছরে ১০ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশিরভাগ আমদানিকারকেরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। এ পথে রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পাট, পাটের তৈরি পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কেমিকেল, বসুন্ধারা টিসু, মেলামাইন, মাছ উল্লেখ্যযোগ্য।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, এ সংক্রান্ত কোন চিঠি আমরা পায়নি। পত্র পত্রিকায় দেখেছি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে শনিবার পর্যন্ত সকল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে রোববার সকাল থেকে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হলেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাক জাতীয় কোন পণ্য রপ্তানি হয়নি। বিভিন্ন ভাবে জানতে পেরেছি ৩০/৩৫ ট্রাক পণ্য এখানে আটকে আছে।