শিরোনামঃ
সিরাজগঞ্জে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হজ যাত্রীদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত সিরাজগঞ্জে বোতলজাত পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করলেন, এমপি ড. জান্নাত আরা হেনরী বেড়ায় তীব্র গরমে পানি ও খাবার স্যালাইনের শরবত বিতরণ সিরাজগঞ্জে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের সাথে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সোহরাব হোসেনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে কাজ করছে সরকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা আড়াই মাসে টিআইএনধারী বেড়েছে ২ লাখ সিসি ক্যামেরার আওতায় আসবে কক্সবাজার প্রতিবন্ধীদের মূল ধারায় আনতে প্রচেষ্টা আছে সরকারের: সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নতুন ১১ জেলা যুক্ত হচ্ছে রেল নেটওয়ার্কে আসছে পড়াশোনার শিক্ষা চ্যানেল এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন নয়: গণপূর্তমন্ত্রী পাহাড়ে শেখ হাসিনার আমলে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে-পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী রংপুর মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে হিন্দু যুবকদের উদ্যোগে পার্থ সারথী বিদ্যাপিঠ গীতা স্কুল সিরাজগঞ্জে ২টি ব্রীজের শুভ উদ্বোধন করলেন এমপি ড. জান্নাত আরা হেনরী

অবকাঠামোর সাথেই শিল্পায়ন

কলমের বার্তা / ১৭৪ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ২২ মে, ২০২২

একদিকে অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলছে এগিয়ে। আরেকদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ চলমান। অবকাঠামো নির্মাণের সাথে সাথেই হচ্ছে শিল্পায়ন। এভাবেই বাস্তব রূপায়ন ঘটতে চলেছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের। প্রায় ৩১ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠছে শিল্পনগর। এটি দেশের একশ’টি অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে সর্ববৃহৎ। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে আসছে ব্যাপক সাড়া। এ পর্যন্ত দুইশ’রও বেশি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। এদের সঙ্গে ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। আরও বিনিয়োগ-শিল্পায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর কোম্পানীগঞ্জ ও সন্দ্বীপ পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করেছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর।

বিনিয়োগ-শিল্পায়নে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেলেও অবকাঠামো নির্মাণকাজে এখনো কার্যত ধীরগতি কাটেনি। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইট-বালু, সিমেন্ট, এমএস রডসহ স্টিল ও লোহাজাত নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিতে নির্মাণকাজে ভাটা পড়ে। এতে করে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর পরিকল্পিত সব রেডি শিল্প প্লটসহ পরিপূর্ণ অবয়ব পেতে বিলম্ব হচ্ছে। ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সংযোগ ও অভ্যন্তরীণ সংযোগ সড়ক, ভূমি উঁচু করে মাটি ভরাট, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ যাবতীয় অবকাঠামো নির্মাণকাজ এবং ইউটিলিটি সার্ভিস দ্রুতায়িত করার‌্য তাগিদ দিচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, ক্ষেত্র বিশেষে অবকাঠামো পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় শিল্প-কারখানা স্থাপনের অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে। এ কারণে শিল্পোদ্যোক্তারা গুণছেন ব্যাংকঋণের সুদ।

তবে ইতিমধ্যে যেসব শিল্প-কারখানার অবকাঠামোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে সেখানে শিল্প স্থাপন করা হচ্ছে। বর্তমানে ২৫টি শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো নিয়ে ১৫টি শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। এসব কারখানা চলতি বছরে উৎপাদনে যাওয়ার টার্গেট রয়েছে। আরও সমসংখ্যক শিল্প-কারখানা স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন (বেজা) কর্তৃপক্ষ শিল্পে বিনিয়োগকারীদের রেডি শিল্পপ্লট বুঝিয়ে দেয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেজা’র প্রয়াসে বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট। দেশের অন্যান্য ইপিজেড ও অর্থনৈতিক জোনের তুলনায় এখানে শিল্পপ্লটের আয়তন প্রায় দ্বিগুণ।

চট্টগ্রামে নতুন শিল্প স্থাপনে শিল্পপ্লটের সঙ্কট ঘোচাতে এক দশক আগে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মীরসরাইতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর স্থাপনের কাজ শুরু হয়। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে শিল্প-প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের গুরুত্ব অপরিসীম। এর যেসব অবকাঠামো এখনও অসম্পন্ন রয়েছে সেই যাবতীয় অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা অবিলম্বে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হলে এটি বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হবে।

উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ৩১ হাজার একর বিস্তীর্ণ জমিতে গড়ে উঠছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’। আরো অন্তত ১৮ হাজার একর জমি নিয়ে সর্ববৃহৎ এই অর্থনৈতিক জোন সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) দেশে একশ’টি অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলছে। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

এই শিল্পনগর পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গড়ে তুলতে সরকার অগ্রাধিকার পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এরফলে বিনিয়োগ-শিল্পায়নে আসছে সাড়া। বিনিয়োগকারীরা শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী পরিপূর্ণ অবকাঠামো সুবিধার জন্য মুখিয়ে আছেন। যেসব শিল্প-কারখানার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে সেখানো শিল্প স্থাপন করা হচ্ছে অথবা প্রক্রিয়াধীন আছে।

২০২১সালের ৩ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এটি জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহনশীল, পরিবেশবান্ধব দেশের প্রথম ‘ইকো বা গ্রিন শিল্পাঞ্চল’ হতে যাচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ প্রকল্প সম্পন্ন করার টার্গেট রয়েছে। রফতানি লক্ষ্যমাত্রা বার্ষিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্যসামগ্রী। ইতোমধ্যে দুইশ’রও বেশি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দশ হাজার একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। বর্তমানে ২৫টি শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে।

দেশি-বিদেশি শিল্প জায়ান্টরা বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে এগিয়ে এসেছে। এরমধ্যে রয়েছে বার্জার, এশিয়ান পেইন্টস, বিআর পাওয়ার, নিপ্পন, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল, মডার্ন সিনটেক্স, চীনের জিনইউয়ান কেমিক্যালস, জিয়াংজু ইয়াবাং ডায়েস্ট কোম্পানি, জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ, এসকিউ ইলেকট্রিক, সায়মান, টিকে গ্রুপ, ওয়ালটন, সামিট, বসুন্ধরা, জিপিএইচ, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এন মোহাম্মদ গ্রুপ ইত্যাদি। শিল্পজোনের ৩১ হাজার একর জমিতে পর্যায়ক্রমে ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রথম ধাপে ৭ লাখ, প্রকল্প সম্পন্ন হলে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের টার্গেট রাখা হয়েছে।

এখানে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা প্রায় এক হাজার একর জমিতে শিল্প স্থাপন করবে। বেপজার বিশেষায়িত ইপিজেজেড নির্মিত হবে সোয়া এক হাজার একর জমিতে। বেশিরভাগই হচ্ছে রফতানিমুখী শিল্প। তাছাড়া বিগত ১৬ মার্চ’২১ইং বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিশেষায়িত গার্মেন্টস পার্ক তৈরির জন্য ২৩৯ একর জমির ইজারা নিয়ে বেজা’র সঙ্গে চুক্তি করেন বিজিএমইএর সদস্য ৪১জন তৈরি পোশাকের কারখানার মালিক। একই দিনে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ‘সমুদ্রমুখী অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন’ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জরিপ পরিচালনার লক্ষ্যে বেজা’র সাথে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এখানে বন্দর স্থাপনে চট্টগ্রাম বন্দর কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে সরাসরি শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), বেসরকারি উদ্যোগ এবং যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব অব্যাহত আছে। শিল্পোদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারীরা একক অথবা যৌথ উদ্যোগে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস ও নীটওয়্যার, ইস্পাত ও লোহাজাত শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, পাটজাত শিল্প, চামড়া শিল্প, রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও মেলামাইন, স্পোর্টস সামগ্রী, খেলনা, সাইকেল, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম, ওষুধ, মেডিকেল সামগ্রী, কন্টেইনার ম্যানুফ্যাকচারিং, ভোজ্যতেল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, হাইব্রিড গাড়ি, মোটরযান ও অটোমোবাইল, আইটি, বিভিন্ন সেবাখাতের পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের উপযোগী শিল্প-কারখানা স্থাপন করছে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিদেশী শিল্পোদ্যোক্তারা ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প স্থাপনে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এই অর্থনৈতিক জোন বিনিয়োগ-শিল্পায়নের সর্ববৃহৎ গন্তব্যে রূপ নিচ্ছে।

100


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর