সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ০৭:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
ভাঙ্গুড়ায় এসএসসি ২০১০ ব্যাচের বন্ধু-বান্ধবীর মিলন মেলা অনুষ্ঠিত পবিত্র ঈদ উল আজহা উপলক্ষে সর্বস্তরের জনগণকে শুভেচ্ছা জানালেন গাজীপুর সিগ্নেচার ক্লাব পবিত্র ঈদ উল আজহা উপলক্ষে সর্বস্তরের জনগণকে শুভেচ্ছা জানালেন গাজীপুর সিগ্নেচার ক্লাব পবিত্র ঈদুল আযহা’র শুভেচ্ছা জানালেন ছাত্রনেতা এম আরিফুল ইসলাম বেড়ায় ক্রমাগত নদী ভাঙনে নিঃস্ব চরাঞ্চলের মানুষ ঈদ আযহা’র শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সেচ্ছাসেবকদলের নেতা আরিফুল ইসলাম উল্লাপাড়ায় অসুস্থ জুবায়ের পাশে মাওলানা রাফিকুল ইসলাম খান উল্লাপাড়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘষে আহত ১৫ গাজীপুরসহ দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল সহযোদ্ধাদের পাশে থাকবে এনসিপি- প্রধান সমন্বয়কারী রকিবুল হাসান

বছরে হাজার কোটি টাকা আয়ের হাতছানি

রিপোর্টারের নাম : / ২০৬ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২

২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রামনাবাদ মোহনায় আন্ধারমানিক নদীর তীরে টিয়াখালীতে ১৬ একর জমির ওপর পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ বন্দরের আনুষ্ঠানিক পণ্য খালাস কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি।

উদ্বোধনের পর থেকে সীমিত পরিসরে আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দরের বহির্নোঙরে অপারেশনাল কার্যক্রম চলছে। ১৬৯টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের অপারেশনাল কার্যক্রম সম্পন্ন করে এখন পর্যন্ত ৩৫৪ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে।

ইতোমধ্যে পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকায় প্রশাসনিক ভবন, সার্ভিস জেটি, পন্টুন, সিকিউরিটি ভবন, ওয়্যার হাউস, পানি শোধনাগার চালু হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন মসজিদও নির্মাণ করা হয়েছে। বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের একটি স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।

বরগুনার আমতলী অংশের কুয়াকাটাগামী মহাসড়ক থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ হয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতু যুক্ত করে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটা সৈকত পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ফলে পায়রা বন্দরের সঙ্গে সুগম হবে দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ বন্দর ঘিরে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কাজ করছেন অনেকে।

পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, এটি দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর। আধুনিক বন্দর হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এখানে ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে। ইয়ার্ড ও জেটি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া বন্দরকে কেন্দ্র করে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। এ বন্দর ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে।

‘এ বন্দর শুধু দেশে নয়, একসময় এশিয়াসহ সারাবিশ্বে বড় পরিচিতি পাবে, ইনশাআল্লাহ। এ বন্দর ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে তোলা এবং দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, এতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।’

মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, এখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ব্যাপক রেভিনিউ আসা শুরু হয়েছে। প্রতি বছর অনেক জাহাজ আসছে। আমাদের প্রাথমিক ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু হবে। বেলজিয়ামের একটি প্রতিষ্ঠান সেটি করবে। এরপর পায়রা বন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে পিছিয়ে থাকবে না। বড় বড় জাহাজ প্রবেশের অন্যতম একটি বন্দর হিসেবে এটি আত্মপ্রকাশ করবে। আগামী বছর জুনের মাঝামাঝি এ বন্দর পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করবে।

‘একদিকে উন্নয়ন কার্যক্রম, অন্যদিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম— দুটোই সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী বছরের জুনের মধ্যে তা আরও ব্যাপকভাবে বেগবান করতে পারব। তখন সারাবিশ্ব জানতে পারবে, পায়রা বন্দর পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করেছে।’

জানা গেছে, পায়রা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নিয়মিত কয়লা আমদানি হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভেনেজুয়েলা থেকে কয়লাবাহী জাহাজ আসছে।

পায়রা থেকে নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌযান চলাচলে বর্তমানে দুটি রুট রয়েছে। একটি পটুয়াখালী হয়ে বরিশাল। অন্যটি ভোলার পশ্চিম থেকে শুরু করে কাজল ও তেঁতুলিয়া নদী হয়ে কালীগঞ্জ। এখানে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

বর্তমানে কন্টেইনার টার্মিনাল, বাল্ক টার্মিনাল, মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, মডার্ন সিটি গড়ে তোলাসহ ১৯টি কম্পোনেন্টের কাজ চলমান। ২০২৩ সালের মধ্যে পায়রা বন্দরকে বিশ্বমানের আধুনিক বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে চায় সরকার।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আরও বলেন, এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়লা আনা হচ্ছে। এখানে যে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে, এ কেন্দ্রের কয়লা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে জাহাজ আসছে। অন্যান্য ফ্যাক্টরি ও ইন্ডাস্ট্রি যখন এখানে নির্মাণ হবে, তার আগেই আমাদের ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানা ধরনের জাহাজ এখানে আসবে।

তিনি বলেন, ঢাকার সবচেয়ে কাছে এ বন্দর। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দূরে। নদীর রুট চিন্তা করলে পায়রা বন্দর থেকে মালামাল নিয়ে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ঢাকায় পৌঁছানো যাবে। পদ্মা সেতু শিগগিরই উদ্বোধন হয়ে যাবে। এরপর সড়ক পথেও দ্রুত পৌঁছান যাবে।

‘এ বন্দরের সম্ভাবনা ব্যাপক। বন্দর ঘিরে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে। প্রচুর লোকজন যাতায়াত করছে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখব, তাদের উন্নয়নে বন্দর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বন্দর না থাকলে আমদানি-রপ্তানি হবে না। আর আমদানি-রপ্তানি না হলে কলকারখানা হবে না। কলকারখানা না হলে মানুষের কর্মসংস্থান হবে না, ভাগ্যের উন্নয়নও হবে না। এসব দিক বিবেচনায় পায়রা বন্দর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, এখন এ বন্দর থেকে বছরে ৪০০ কোটি টাকার কাছাকাছি আয় হচ্ছে। পুরোপুরি চালু হলে আমার বিশ্বাস, তখন বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় হবে। তবে এটি নির্ভর করছে জাহাজ আসা-যাওয়ার ওপর। আর জাহাজ আসা-যাওয়া নির্ভর করবে বন্দরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ওপর।

জানা গেছে, বন্দরের মূল চ্যানেলে ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করার জন্য বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি ‘জান ডি নুল’-এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটি দেশের রিজার্ভের অর্থাৎ ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের’ প্রথম প্রকল্প চুক্তি। এ চুক্তির ফলে ৫৩ ভাগ অর্থ সাশ্রয় হবে। রাবনাবাদ চ্যানেলের ড্রেজিং কাজ আগামী বছরের মধ্যে শেষ হবে। তবে এটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের এপ্রিলে।

ড্রেজিং কাজ শেষ হলে বন্দরে তিন হাজার টিইইউ (বিশ ফুটের কন্টেইনার) অর্থাৎ ৪০ হাজার ডিডব্লিউটি কার্গো বহন ক্ষমতাসম্পন্ন বড় বাণিজ্যিক জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। বন্দরটি পুরোপুরি চালু হলে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটবে।

ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের দায়িত্ব থাকা পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমোডোর রাজীব ত্রিপুরা বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে মূল ড্রেজিং কাজ শেষ হবে। এরপর রক্ষণাবেক্ষণের একটি বিষয় আছে। যে গভীরতা হবে, সেটি ধরে রাখতে রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। এটি ধরলে প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের এপ্রিলে শেষ হবে বলে আশা করা যায়।

নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এর সুবাদে বন্দরসংলগ্ন জেলা বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলাসহ দেশের অন্যান্য জেলার মানুষের একদিকে যেমন কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নিশ্চিত হবে।

‘পোশাক শিল্পের মতো গতিশীল হচ্ছে আমাদের জাহাজ নির্মাণ শিল্প। ফলে এখানে এ শিল্পেরও প্রসার ঘটবে। দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আছে। বিশ্বজুড়ে এ শিল্পে প্রায় চার হাজার কোটি ডলারের বাজার। বাংলাদেশের দখলে মাত্র ৪০০ কোটি ডলার। পায়রা বন্দর ঘিরে এ খাত বিকশিত হলে অচিরেই বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর জাহাজ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর