• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
রায়গঞ্জে কমিউনিটি এডুকেশন ওয়াচ গ্রুপ পূনঃগঠন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত সোনার বাংলা এসএসসি ২০০০ ব্যাচের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল ঠাকুরগাঁও অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁওয়ে রোজাদার ও শিশুদের মাঝে ইফতার বিতরণ রায়গঞ্জে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে মৌসুমী বন্যায় আগাম সাড়াদান প্রকল্পের অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত ভাঙ্গুড়ায় মাদকাসক্ত স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে স্ত্রীর আত্মহত্যা,মেয়ের পরিবারের অভিযোগ হত্যা ঠাকুরগাঁওয়ে ২৩৩ টি হারানো মোবাইল উদ্ধার লালমনিরহাটে বিএসএফ গুলিতে আহত বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু! ‘শূন্যের বৃত্ত’ থেকে বের হলো বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত স্বাধীনতা দিবসে ভারত রাশিয়া ও চীনের শুভেচ্ছা ঈদযাত্রায় এবার স্বস্তির আশা চীনের পর বাংলাদেশের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার আসিয়ান অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান দেখতে কুড়িগ্রাম যাচ্ছেন ভুটানের রাজা টিকিট কালোবাজারি বন্ধে জিরো টলারেন্স: রেলমন্ত্রী প্রশিক্ষণে আসবেন ভুটানের ডাক্তার-নার্স অসাম্প্রদায়িক মানবিক ও স্মার্ট দেশ গড়ার প্রত্যয় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারে মিষ্টি পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার চেতনায় উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ব: প্রধানমন্ত্রী সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে নানা আয়োজনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন 

পদ্মা সেতু ঘিরে বিশাল অভয়ারণ্য হচ্ছে

কলমের বার্তা / ১৭১ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২

পদ্মা সেতু ঘিরে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় চার জেলার নদী তীর ও পদ্মার বিশাল এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘোষণাটি বাস্তবায়ন হলে পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণের কারণে জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার পাশাপাশি পুরো এলাকার প্রকৃতি স্বরূপে ফিরবে। জলজ প্রাণীর বিচরণের পাশাপাশি বাড়বে মাছের উৎপাদন। এদিকে পদ্মা সেতু প্রাণী জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে।

এই জাদুঘরে এরই মধ্য স্থান পেয়েছে ১৪১৯ প্রজাতির ২১২৮ প্রাণীসহ ২৩৫৬টি নমুনা। প্রাণীগুলোকে এমনভাবে রাখা হয়েছে এই জাদুঘরে যাতে যে কারোই মন ভরে যাবে। কর্তৃপক্ষ বলছে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এই প্রাণী জাদুঘর শুধু বিনোদনই নয় গবেষণায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিভাগের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা এই জাদুঘরে দুর্লভ প্রাণীও স্থান পেয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা ১ নম্বর সার্ভিস এরিয়ায় এই জাদুঘরটির স্থান। তাই এখনও এই জাদুঘর সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি, তবে নক্সা প্রণয়ন হয়েছে শীঘ্রই নতুন ভবন করে এটি সরিয়ে নেয়া হবে। একই সঙ্গে থাকবে পদ্মা সেতু জাদুঘর। এই জাদুঘরে স্থান পাচ্ছে সেতুর নির্মাণশৈলীর সব রকমে রেপ্লিকা।

সেতুর তলদেশের নরম মাটিতে পাইল স্থাপনের উদ্ভাবনী কৌশল, বড় মাপের ভূমিক¤প মোকাবেলার বেয়ারিংসহ ভিন্ন ভিন্ন সব কিছুই। জাদুঘরে থাকবে সেতুটি তৈরিতে ব্যবহৃত হ্যামারসহ নানা রকমের আলোচিত যন্ত্রপাতির রেপ্লিকা। আর জাদুঘর ভবনের বাইরে স্থাপন করা হবে সেতুর স্প্যান।

এই জাদুঘর পূর্ণাঙ্গ রূপ নিলে দেশের প্রকৌশল গবেষণায় বড় অবদান রাখবে। আকৃষ্ট হবে দেশী-বিদেশী পর্যটক। তাই পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগই নয় এই অঞ্চলের ঐতিহ্য রক্ষণেও অবদান রাখছে।

অভয়ারণ্য ॥ বিশাল পদ্মার মাওয়া প্রান্ত আর জাজিরার সঙ্গে বন্ধন তৈরি করা স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঘিরে পরিবেশের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে নানা পরিকল্পনা। সেতু ঘিরে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত রাখতে পুরো এলাকা সুরক্ষায় জলাভূমির বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।

উদ্ভিদ, জলজ প্রাণী ছাড়াও এখানে নানা প্রজাতির পাখি গাছপালা ও লতাগুল্ম রয়েছে। এই প্রকল্পের টিম লিডার ড. এস এম এ রশিদ জানান, এতে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করা যাবে। সরকারের এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। ‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কার্যক্রম, পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’ নামের এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এখন পুরো এলাকায়।

ফরিদপুরের সদরপুর, মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের জাজিরা ও মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার প্রায় ১১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এই অভয়ারণ্যের ৮১ বর্গকিলোমিটার কোর জোনে প্রকৃতি বিনষ্টের কোন কার্যক্রম করা যাবে না। আর ৩৬ বর্গকিলোমিটার বাফার জোনে অনুমতি সাপেক্ষে ভ্রমণ ও স¤পদ আহরণ করা যাবে। তবে বসতি স্থাপন করা যাবে না।

পৌনে ২ লাখ বৃক্ষরোপণ ॥ পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকার বেশিরভাগ স্থানই এখন ঘন সবুজ। চারদিকে নানা রকমের বৃক্ষ ছায়া দিচ্ছে, ফল দিচ্ছে, অক্সিজেন ছাড়াও পুরো এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বড় অবদান রাখছে। পরিকল্পিত বনায়নের এলাকার প্রকৃতি পাল্টে গেছে। প্রকল্পের সাতটি পুনর্বাসন কেন্দ্র, তিনটি সার্ভিস এরিয়া, জাজিরা ও মাওয়া এ্যাপ্রোচ রোড এবং আশপাশে ২০১২ থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৯৪টি বৃক্ষ রোপণ করেছে সেতু বিভাগ। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, গাছগুলো রোপণের পর পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাই এই সবুজায়ন।

সরকার ঘোষিত অভয়ারণ্য কার্যকর হলে পদ্মা ফিরে পাবে হারানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঐতিহ্যবাহী রুপালি ইলিশসহ সব মাছের প্রসার আরও বাড়বে। পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা ভজন দাস বলেন, পদ্মা হচ্ছে অনেক বড় খনি। পরিবেশ ঠিক থাকল। এখান থেকে যে মাছ আহরণ করা যাবে তা দেশের মৎস্য খাতে বড় অবদান রাখবে। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কারণে এলাকার পরিবেশ সুরক্ষা হচ্ছে।

প্রাণী জাদুঘর ॥ পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি পদ্মা অববাহিকার বন্য ও জলজ প্রাণী নিয়ে গবেষণায় বড় ভূমিকা রাখবে এই সংগ্রহশালা বলে জানিয়েছেন প্রাণী জাদুঘরটির সার্ভিস প্রভাইডার রিপ্রেজেন্টেটিভ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম নিয়ামুল নাসের। তিনি মনে করেন এই সংগ্রহশালা পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে প্রকৃতিপ্রেমী করতে সহায়ক হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠছে জাদুঘরটি।

২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ পর্যায়ে। পদ্মা অববাহিকার জেলা শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ ও অঞ্চলের প্রাণী নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পদ্মা সেতু প্রাণী জাদুঘর। সেতু বিভাগের কাছে হস্তান্তরের পর পদ্মা সেতু প্রাণী জাদুঘর উন্মুক্ত হবে সর্বসাধারণের জন্য। জঙ্গল নয়, তবে এখানে দাপিয়ে বেড়ায় সব প্রাণী। মগ ডালে বসে গ্রহর গুনছে হারিয়ে যাওয়া এক বাংলা শকুন। একটু পাশেই উঁকি দিচ্ছে হিমালয় শকুন।

গন্ধগোকুল আড়মোড়া ভাঙছে সতর্কভাবে। গাছ থেকে গাছে উড়ে বেড়ানো প্যাঁচা, বাদুড়, চিলসহ শিকারি পাখির সংগ্রহও কম নয়। দেখা মিলল চিরচেনা বানরের। পদ্মা নদীতে পাওয়া শুকুরের হাড় দিয়ে সাজানো হচ্ছে কঙ্কাল। চকচকে চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে শিয়াল। ঝোপঝাড়ের ধেড়ে ইঁদুর খাবার ছিনিয়ে নিতে প্রস্তুত। মৃত প্রাণীর চামড়া দিয়ে বানানো নমুনা দেখে জীবন্ত ভাবতে পারেন যে কেউ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার চেয়ারম্যান অধ্যাপক নিয়ামুল নাসের জানান, পরবর্তী প্রজন্ম যখন এখানে আসবে, তখন দেখতে পাবে পদ্মা নদীর আশপাশে কি ছিল। দায়িত্বশীলরা বলছেন, কিছু প্রাণী আছে এই এলাকার তালিকাভুক্ত করা কিন্তু অত্যন্ত দুর্লভ বলে এখানে পাওয়া সম্ভব না। যার কারণে অন্য এলাকায় যখন যে প্রাণী মারা যাচ্ছে তা সংগ্রহ করা হচ্ছে। বছর দুয়েক আগে পদ্মায় ধরা পড়া প্রায় আড়াই কেজি ওজনের ইলিশটি সাজিয়ে রাখা হয়েছে কাচের বাক্সে। কাজুলি, উজুক্কু, শিং, আইড়সহ নানা প্রজাতির মাছের দেখা মিলছে এই জাদুঘরে। পদ্মার গলদা চিংড়ি, শামুক, ঝিনুক, ব্যাঙ সাপসহ এই অববাহিকার বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণী নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। মাছ শিকারের নানা উপকরণও সাজিয়ে রাখা হয়েছে থরে থরে।

কিউরেটর সুমন ম-ল বলেন, রক্ষণাবেক্ষণে গ্রহণ করা হয়েছে আধুনিক এবং বিশ্বমানের প্রযুক্তি। প্রাণীগুলো মৃত অবস্থায় নানা স্থান থেকে সংগ্রহের পর তা প্রক্রিয়া করে এখানে প্রদর্শন করা হয়।

101


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর