শিরোনামঃ
হুমকিতে আমচাষী থানায় জিডি জবির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে হৃদয় হোসেন রানা লালমনিরহাটে মাদক কারবারে বাঁধা-শালিসি বৈঠকে ইউপি সদস্যকে মারধর! রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের হালখাতা ও ঋণ আদায় মহাক্যাম্পের উদ্বোধন! বেলকুচিতে ভাইরাল ভিডিওকে গুজব ও পুলিশের মামলাকে মিথ্যা দাবী করে সংবাদ সম্মেলন ভুল তথ্যে প্লট কেনা ও হস্তান্তরে বরাদ্দ বাতিল ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী’ রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রণোদনার সুপারিশ বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউটে যুক্ত হচ্ছে আরও ৫০০ শয্যা চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এখন দৃশ্যমান আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তি ৭০ কোটি ডলার মিলবে জুনে সরকারিকরণ হলো জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর শার্শায় ট্রাক্টর চাপায় প্রাণ গেল গৃহবধুর, আহত ৩ শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাসভবনের সামনে গভীর রাতে বোমা বিস্ফোরণ বন্দিদের সুস্থ রাখতে নানা উদ্যোগ কারাগারে কালিয়াকৈরে ১ একর বন বিভাগের জমি উদ্ধার    জুনে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাচ্ছে দ্বিতীয় ইউনিট দক্ষিণে বাড়ল কমিউটার ট্রেন যাত্রী পরিবহন শুরু আজ বেপরোয়া তাকওয়া ময়লার গাড়িতে ধাক্কা, আহত-১

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট থেকেঃ

ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের

কলমের বার্তা / ২৪০ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : সোমবার, ২০ জুন, ২০২২

কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা নদীর বাম তীরে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের।

সোমবার (২০ জুন) দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৯১ মিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ মিটার) বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে রোববার (১৯ জুন) সকাল ৬টায় একই পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিকেলে কমে যায়। ব্যারেজ ও নদী তীরবর্তী মানুষ জানান, গত দুই সপ্তাহ থেকে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে গত মাসের শুকনো মরুময় তিস্তার পানিতে ফুলে ফেঁপে ওঠে।

গত সপ্তাহ থেকে তিস্তা নদীর পানি কখনো কখনো বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর এবং ৮/১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তার বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার সৃস্টি হয়। বন্যার পানি নামতে না নামতেই আবারও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চলের প্রায় অর্ধালক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।

সোমবার (২০ জুন) সকালে আবারও বিপৎসীমা অতিক্রম করে তিস্তার পানি। বিকেল ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে দুপুর ১২টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। অতিরিক্ত পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উজানের ঢেউ বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ভারী বৃষ্টির কারণে জেলার ছোট ছোট নদী ও খাল ভরেছে পানিতে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। এজন্য তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও খুব সহজেই মুক্তি পাচ্ছে না পানিবন্দি পরিবারগুলো। পানি নেমে গেলেও আবার বাড়ছে। এভাবে কেউ কেউ টানা ৫/৬ দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছেন। পানিবন্দি এসব পরিবারের মাঝে শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।

বন্যার পানিতে ডুবে আছে কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল বাদাম। বিগত বন্যায় পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া আর তামাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বন্যায় বাদাম ক্ষেত ডুবে নষ্ট হয়েছে। সব মিলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিস্তার চরাঞ্চলের চাষিরা।

নদীপাড়ের মানুষজন জানায়, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল গত ৪/৫ দিন ধরে ডুবে আছে। এসব এলাকার ৩০/৩৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ।

পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। আদিতমারীর সলেডি স্প্যার বাঁধ-২তে যাওয়ার সড়কটির অর্ধেকাংশ ধসে গেছে। বাকিটুকু ধসে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। সব মিলে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের। তিস্তার বাম তীরের প্রায় ১০/১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠেছে।

নদী ভাঙনও বেড়েছে কয়েকগুন। মুহূর্তেই বিলীন হচ্ছে বসতভিটা আবাদি জমি আর স্থাপনা। তিস্তার ভাঙনে শনিবার দিনগত রাতে বিলীন হয়েছে হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর ডাউয়াবাড়ি আলহাজ্ব আছের মামুদ সরকার গণনিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও উত্তর ডাউয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কমিউনিটি ক্লিনিক ভাঙনের মুখে পড়েছে। চলতি মৌসুমে ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় ৬০টি বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আজাহারুল ইসলাম আতিক।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, গত সপ্তাহ ধরে তিস্তার পানি বাড়া কমা করছে। প্রথম দিকে আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি ছিল। তাদের ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। গতরাতের বন্যায় আরও দ্বিগুন হয়েছে পনিবন্দির সংখ্যা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ পয়েন্টে তিস্তার পানি সোমবার বিকেল ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি প্রবাহ আরও কিছুটা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, জেলায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ১৫০ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং শিশু খাদ্য, গো-খাদ্য ও শুকনো খাবার বিতরণের জন্য সর্বমোট ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নদী ভাঙনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীনের খবর জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

102


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর