শিরোনামঃ
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ আহত-৪ গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ আহত-৪ অবশেষে কারা মুক্ত হলেন মাওলানা মামুনুল হক সেনা সদস্যদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রাজশাহীতে দৈনিক মানবিক বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন তাপদাহ উপেক্ষা করে ফসল কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকরা এপ্রিলে রেমিট্যান্স এলো ১৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে যাচ্ছে বাংলাদেশের হাইব্রিড ধানবীজ বেতাগীতে তীব্র গরমে তৃষ্ণার্তদের মাঝে ঠান্ডা পানি ও শরবত বিতরণ  হজ ব্যবস্থাপনায় অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে : ধর্মমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বৈষম্যের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন: খাদ্যমন্ত্রী ঢাকাকে পরিবেশ বান্ধব সুন্দর শহরে রূপান্তরিত করা হবে : রাজউক চেয়ারম্যান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিকজোট বাংলাদেশ এর র‍্যালী ও আলোচনাসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে আ. লীগকে আমন্ত্রণ বিজেপির ধান উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে: পরিবেশমন্ত্রী দ্বাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসছে আজ আইপিডিআই ফাউন্ডেশন হৃদরোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে : স্পিকার যতবার সরকারে এসেছি শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছি: প্রধানমন্ত্রী বেসিস নিয়ে আব্দুল আজিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কাজিপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রকার কারচুপি বরদাস্ত করবে না প্রশাসন

দেশি রড, বালু ও সিমেন্টে তৈরি পদ্মা সেতু

কলমের বার্তা / ১৭৭ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২

পদ্মা সেতুতে বাংলাদেশসহ অন্তত ২০টি দেশের বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান ও কর্মীরা কাজ করেছেন। তাদের মেধা আর  শ্রমে গড়ে উঠেছে পদ্মা সেতু। সেতুতে যেসব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির তৈরি। তবে রড, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহৃত হয়েছে বাংলাদেশের।

সেতু বিভাগের তৈরি তালিকা অনুযায়ী, মূল সেতুর কাজে বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, ভারত,  লুক্সেমবার্গ, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ার তৈরি নানা উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এর বাইরেও সেতুর কাজে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসসহ আরও অনেক দেশের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়।

সেতুতে কর্মরত প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশে উৎপাদিত রড ও সিমেন্ট এবং দেশীয় বালু। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সেতু নির্মাণকারী চাইনিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির সূত্র বলছে, পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো স্টিলের। তবে মূল সেতুতে স্টিলের বাইরেও ৩০টি উপকরণের ব্যবহার বেশি হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় রড, সিমেন্ট, বালু, বৈদ্যুতিক ক্যাবল, পাইপ, ডিজেল, বিটুমিন ও জিও ব্যাগ রয়েছে। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে রড, সিমেন্ট, বালু ও পাথরের ব্যবহার আরও বেশি হয়েছে।

সেতু বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, পদ্মা সেতুতে সিমেন্ট লেগেছে আড়াই লাখ টনের বেশি। পুরোটাই ব্যবহৃত হয়েছে দেশে তৈরি ‘স্ক্যান সিমেন্ট’। রড লেগেছে ৯২ হাজার টনের বেশি। ‘বিএসআরএম’ এবং ‘কেএসআরএম’ নামে দুটি ব্র্যান্ডের দেশীয় রড ব্যবহৃত হয়েছে। সেতু বিভাগ জানায়, পদ্মা সেতুতে বালু লেগেছে সাড়ে তিন লাখ টন, যার পুরোটাই সিলেটের। সিলেট থেকে আনা প্রাকৃতিক বালুই ব্যবহার করা হয়েছে এই সেতুতে।

জানা গেছে, সেতু তৈরিতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য সোয়া ৪ কোটি লিটার ডিজেল পোড়ানো হয়েছে। বিটুমিন লেগেছে ২ হাজার টনের বেশি। নদী তীর রক্ষায় ২৫০ কেজি ওজনের জিও ব্যাগ বসানো হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ। এগুলোর সবই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে কেনা হয়েছে। দেশে তৈরি বিদ্যুতের ক্যাবল ব্যবহার  হয়েছে প্রায় পৌনে ৩ লাখ মিটার এবং পাইপ এক লাখ ২০ হাজার মিটার, যা বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত।

পদ্মা সেতু নির্মাণে কংক্রিটের পথের ওপরে প্রথমে দুই মিলিমিটারের পানি নিরোধক একটি স্তর বসানো হয়েছে, যা ‘ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন’ নামে পরিচিত। যুক্তরাজ্য থেকে ৫৬০ টন ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন আনা হয়েছে। সেতুর পাশে রেলিংয়ের অ্যালুমিনিয়ামও এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে।

সেতুতে ব্যবহৃত স্টিলের উপকরণ এবং কলকবজার প্রায় সবই বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। পদ্মা সেতুর কাজ পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে— মূল সেতু, নদী শাসন, দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং অন্যান্য অবকাঠামো। সংশ্লিষ্টরা জনিয়েছেন, পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের ওপরের অংশের মাটিকে বেশি ওজন বহনে সক্ষম বিশেষ ধরনের মাইক্রোফাইন বা অতিমিহি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। দুই হাজার টন এই বিশেষ সিমেন্ট আনা হয় সিঙ্গাপুর থেকে।  লুক্সেমবার্গ থেকে আনা হয় ৯ হাজার টনের বেশি রেলের গার্ডার (স্ট্রিনজার)। অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয় সেতুর পানি নিষ্কাশনের পাইপ ও পাইল বসানোর জন্য ব্যবহৃত পলিমার। এর মধ্যে পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে ৩৯ হাজার মিটার। আর পলিমার ব্যবহার করা হয়েছে ২৪৯ টন। সেতুতে ব্যবহারের জন্য ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৫ থেকে ২০ মিলিমিটারের সোয়া পাঁচ লাখ টন পাথর আনা হয়।  এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অ্যালুমিনিয়াম আনা হয়েছে, যা সেতুর রেলিংয়ে ব্যবহার করা হয়।

পদ্মা সেতুতে দুই ধরনের পাইল বসানো হয়েছে। মূল সেতু অর্থাৎ নদীর অংশে তিন মিটার ব্যাসার্ধের পাইপের মতো (ভেতরে ফাঁকা) স্টিলের পাইল বসানো হয়েছে ২৬৪টি। এসব পাইল এসেছে চীন থেকে। এগুলোর ওজন ছিল প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার টন। পদ্মা সেতুতে স্টিলের স্প্যান বসানো হয়েছে ৪১টি। চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হেবেই প্রদেশের কারখানায় স্টিলের প্লেট দিয়ে এসব স্প্যান তৈরি করা হয়। স্প্যানগুলোতে লেগেছে ১ লাখ ২৬ হাজার টন স্টিলের প্লেট।

রিখটার স্কেলে প্রায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করতে পদ্মা সেতুতে বিয়ারিং বসানো হয়েছে ৯৬ সেট। ভূমিকম্পের সময় সেতুটিকে সুরক্ষা দিতে ব্যবহৃত কলকবজার মধ্যে এই বিয়ারিংকে বলা হয় ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং। সবচেয়ে বড় বিয়ারিংয়ের ওজন ২৫ টনের মতো। এক সেট বিয়ারিং প্রায় ১০ হাজার টন ওজনের ভার বহন করতে সক্ষম। পদ্মা সেতুর আগে পৃথিবীর আর কোনও সেতুতে এ ধরনের বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়নি বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

এই বিয়ারিং ছাড়াও পদ্মা সেতুতে অন্য ধরনের ৩ হাজার ৫৫৬ সেট বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বিয়ারিং সেতুটির বিভিন্ন অংশকে যুক্ত রাখতে সহায়তা করছে। সব সেতুতেই তাপ ও চাপে সংকোচন-প্রসারণের জন্য সম্প্রসারণশীল জোড়া (এক্সপানশন জয়েন্ট) থাকে। এ কাজে ২৮ সেট বিয়ারিং স্থাপন করা হয়েছে। এই তিন ধরনের বিয়ারিং আনা হয়েছে চীন থেকে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের বলেন, ‘দেশি-বিদেশি ৩০ ধরনের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা এই সেতুতে দেশীয় কোম্পানির রড, সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে সিলেটের বালু। তবে এসব নির্মাণ সামগ্রী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী এসব নির্মাণ সামগ্রী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাইনিজ কোম্পানি সরবরাহ করেছে। এখানে আমাদের কোনও পছন্দ-অপছন্দ ছিল না।’

105


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর