মানবাধিকার রিপোর্ট সঠিক নয়, তথ্যবিভ্রাট
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে সরকারের মন্ত্রীরা বলেছেন, এটা সঠিক নয়। এতে তথ্যবিভ্রাট হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটিও ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজবন্দি বলা হয়েছে। আসলে তিনি রাজনৈতিক বন্দি নন। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘রিপোর্টটি আমি পড়েছি। এটা একেবারেই সঠিক নয়। সোমবার মন্ত্রিপরিষদের মিটিং শেষে এর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাব। সেই সময় পর্যন্ত আপনারা অপেক্ষা করুন’।
সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে তথ্যবিভ্রাট হয়েছে। এ অভিযোগটা বোধহয় ২০২১ সালের, ২০২২ সালের নয়। ২০২১-এ যে সংখ্যক গুম-খুনের কথা এখানে বলা হচ্ছে আমাদের রেকর্ডে তা নেই।
তিনি বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা যদি কেউ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন, নিরাপত্তা বাহিনী আত্মরক্ষায় যদি গুলিও করেন তাহলে প্রত্যেক ঘটনায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তদন্ত করানোর ব্যবস্থা করি। এতে যদি ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হয় তাহলেই সেই বিষয়টি আমরা ক্লোজ করে দেই। যদি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেন এখানে ঘটনাটি অন্যায় বা অসতর্কতায় হয়েছে, সেটা আমরা বিচার বিভাগে পাঠিয়ে দেই।
আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, আপনারা নিশ্চই জানেন, জেলখানায় আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর যথেষ্ট পরিমাণ ইন্সপেক্টর লেভেল থেকে ডিআইজি লেভেল পর্যন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। এটাই শুধু নয়, র্যাবেরও অনেক সদস্য রয়েছেন। এর অর্থ কেউই বিচারের ঊর্ধ্বে নন। এখানে যিনি অন্যায় করবেন তাকেই বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যেটা করেছে, তাদের তথ্যবিভ্রাট হয়েছে বলে আমি মনে করি।
নিরাপত্তা বাহিনী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এটা বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় হতো। পেছনের কথা যদি তারা বলে, এটা আমার জানা নেই। যখন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন থেকে কোনো ধরনের অন্যায়-অত্যাচার নিরাপত্তা বাহিনী করলে তাকে কিন্তু আইনের মুখোমুখি আনা হচ্ছে। আমি সেটাই বারবার স্পষ্ট করে বলছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, গুম-খুনের কথা যেগুলো বলছেন, এগুলো প্রায়ই অনুসন্ধান করে আমরা দেখেছি, তারা অনেকেই হয়তো আত্মগোপন করে গুম বলে চালিয়ে দিয়েছেন। হয়তো ব্যবসায় লোকসান করে নিজেই কোথাও চলে গেছেন। এই কিছুদিন আগেও আপনারা দেখেছেন, এক লোক আড়াই বছর পর বলেছেন ইচ্ছে করেই গুম হয়েছিলেন পরিবারের অশান্তির কারণে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অনেককেই খুঁজে বের করে দিয়েছে। আমি এখনো জোর গলায় বলতে পারি, যে প্রতিবেদনটা বের হয়েছে তাতে তথ্যের গরমিল রয়েছে।
বিচার বিভাগ ব্যবহার করে রাজনৈতিক হয়রানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ যখন যে নির্দেশনা দিচ্ছে সব জায়গায় সেটি পালন হচ্ছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন, হয়রানি হবে কীভাবে।
নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিতে সরকারের দায়মুক্তি দেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্ট-২০২১ এ তা নাকচ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ৭৪ পৃষ্ঠার রিপোর্টটি পর্যালোচনা করছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত যা দেখেছেন তাতে মনে হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুটিও ভুলভাবে মার্কিন রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এলজিবিটিদের জন্য বাংলাদেশে আইন নেই এবং বাংলাদেশ তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না-প্রতিবেদনের এ অংশের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের ইসলাম ধর্মের পরিপন্থি। পৃথিবীর এমন একটা মুসলিম দেশ দেখান যারা এলজিবিটিকে অনুমোদন দেয়। যত দেশ বা সংস্থা থেকে চাপ আসুক না কেন এলজিবিটি প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবে না বাংলাদেশ। এটা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বিরোধিতা করা হবে, ধর্মের সঙ্গে বিরোধিতা করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার ইতিহাসও এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে রাজনৈতিক বন্দি বলা হয়েছে। তিনি তো রাজনৈতিক বন্দি নন। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যতবার এ নিয়ে কথা বলেছি, সেখানে আমরা সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তাকে মানবিক কারণে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে বাসায় থাকতে দেওয়া হয়েছে। তার বিদেশে যাওয়ার প্রশ্নটাও অমূলক ছিল। রোহিঙ্গাদের বিষয়েও ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ১০-১২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচর থেকে পালানোর সময় নৌকাডুবি হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এটাও কী আমাদের দোষ? আমাদের ঘাড়ে এ দোষ চাপানো হয়েছে।